নলকূপ নিয়ে বিরোধে কাটা হয়েছে সেচের ড্রেন, বিপাকে কৃষক

01দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গভীর নলকূপের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে পানি সেচ দেওয়া ড্রেন কেটে ফেলেছে প্রতিপক্ষরা। এ কারণে বোরো ধান চাষের জন্য পানি সেচ দিতে না পারায় বিপাকে পড়েছে গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষক।

ফুলবাড়ী উপজেলার ঘরগোবিন্দপুর গ্রামের বোরো চাষিরা জানান, এই গভীর নলকূপটির মালিকানা জটিলতায় তাদের বোরো চাষ প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তারা আরও জানান, বোরো রোপণের সময় চলে যাচ্ছে অথচ নলকূপ থেকে জমিতে পানি যাওয়ার ড্রেনগুলো কেটে ফেলার কারণে তারা জমিতে সেচ দিতে পারছেন না।

জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার হরগোবিন্দপুর মৌজায় ১৯৮৫ সালে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএডিসি’র সরকারি অনুদানে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। নলকূপটি ঝকঝকা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে নুরুজ্জামান মালিকানা দাবি করলেও একই এলাকার গ্রামবাসীর একাংশ এই নলকূপটি কৃষক সমিতির দাবি করে।

এ ঘটনায় নলকূপটির মালিকানা নিয়ে কয়েক বছর থেকে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় বোরো চাষের জন্য সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে গত বোরো মৌসুমে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বেতদিঘী ইউপি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে নলকূপটি পরিচালিত হয়। চলতি মৌসুমে নুরুজ্জামান তার বাবার (আব্দুল খালেকে) কাগজপত্র দেখিয়ে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে পানি সেচ দিতে গেলে সেখানে বাধা দেয় প্রতিপক্ষ গ্রামবাসীর একাংশ। তারা নলকূপটির পানি সেচ দেওয়া ড্রেন কেটে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে প্রায় দু’শ বিঘা জমির বোরো চাষিরা।

নুরুজ্জামান জানান, ‘এই নলকূপটি তার বাবা আব্দুল খালেক বিএডিসি’র কাছ থেকে কিনেছে। সেই সূত্রে এখন এই নলকূপটির মালিক তিনি। আর সেই কাগজপত্র দেখে পল্লী বিদুৎ তার নামে বিদ্যুৎতের সংযোগ দিয়েছে।’

এদিকে ঝকঝকা গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, ‘এই গভীর নলকূপটি কৃষক সমবায় সমিতির। অথচ এটি সাবেক ম্যানেজারের ছেলে নুরুজ্জামান নিজের বলে দাবি করায় এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।’

এই বিষয়ে বিএডিসি দিনাজপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) শামিম আহম্মেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হরগোবিন্দপুর মৌজার জেএল নং ১১৯ এর ২৫৬ নং দাগে সরকারি অনুদানে হরগোবিন্দপুর কৃষক সমবায় সমিতির নামে গত ১৯৯৫ সালের ২৮ মে এই নলকূপটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু সেই সময় জামানত বাবদ মাত্র ১৩ হাজার টাকা ছাড়া আর কোনও টাকা কৃষক সমিতি জমা দেয়নি। যার কারণে নলকূপটি আব্দুল খালেককে ভাড়ায় সেটি পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর আব্দুল খালেক এই নলকূপটি ভাড়ায় চালিয়ে আসছেন।

এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন , ‘ওই এলাকার কৃষকরা যাতে বোরো চাষ করতে পারে সে জন্য উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি সমঝোতার চেষ্টা চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলে আশা করছি।'