কুড়িগ্রামে বাড়িতে ঢুকে নারীদের ওপর পুলিশি হামলার অভিযোগ

কুড়িগ্রামকুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রাম এলাকায় জমি নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে একপক্ষের বাড়িতে হামলা করে নারীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর প্রায় ১৫ কিলোমিটার হেটে এসে নির্যাতনের শিকার নারী ও পুরুষরা উপজেলা চত্বরে নাগেশ্বরী থানার ওসিসহ পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
শুক্রবার (৭ আগস্ট) দুপুরে পুলিশি হামলার পর বিকালে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।

হামলার শিকার এলাকাবাসী জানায়, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রাম এলাকার মৃত ফজর আলীর স্ত্রী জামেলার সঙ্গে মজিবর রহমানের ছেলে আব্দুল খালেকের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। বিরোধ মীমাংসার জন্য থানায় একাধিকবার শালিশী বৈঠক হলেও তা নিরসন হয়নি। এরমধ্যে শুক্রবার দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নাগেশ্বরী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজনা নিরসনের চেষ্টা করে। এতে দুই পক্ষ সরে গেলেও কিছুক্ষণ পর ওসি রওশন কবীর আরও ফোর্স নিয়ে গিয়ে স্থানীয়দের ঘরের দরজা ভেঙে নারীদের ওপর হামলা করেন। এ সময় পুলিশের টানা হেঁচরায় পরিধেয় পোশাক ছিঁড়ে যায় বলে অভিযোগ করেন কয়েক জন নারী। পুলিশি হামলায় আহত কয়েক জনকে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হলে পুলিশ হাসপাতাল চত্বর থেকে ৮-৯ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এ খবর এলাকায় পৌঁছালে শুক্রবার বিকালে ছেঁড়া পোশাকসহ, ঝাড় ও লাঠি নিয়ে ওসি রওশন কবীরসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা চত্বরে আসে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দামাল গ্রামে জমি নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধে প্রথমে এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু পুলিশ আব্দুল খালেক ও তার পরিবারের পক্ষ নিয়ে বিপরীত পক্ষসহ এলাকার নিরীহ নারী-পুরুষদের নির্বিচারে লাঠিপেটা করে। হামলায় আহতরা চিকিৎসা নিতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এলাকাবাসী প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করলে পুলিশ সেখানেও লাঠিচার্জ করে।

পুলিশের হামলায় আহত দামাল গ্রামের নারী জুলেখা বেগম জানান, তিনি দুপুরে গাইবান্ধা থেকে বাড়িতে ফিরে দেখেন বাড়ির সামনে পুলিশ। জানতে পারেন দুই পক্ষের উত্তেজনার কারণে পুলিশ এসেছে। বাড়ির সামনের পুলিশ সদস্যরা তার কাছে পানি খেতে চাইলে তিনি তাদের পানি দেন। এরপর তারা সুপারি খেতে চাইলে তিনি মেয়েকে সুপারি কাটতে বলে গাছ থেকে পান আনতে যান। পান নিয়ে ঘরে ফিরতেই কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ ওসি নিজেই তাকে লাঠি দিয়ে বেদম পেটাতে থাকেন। এ সময় তার মেয়ে মিনা (১৭) বাধা দিতে গেলে তাকেও মারে।

জুলেখা বলেন, ‘আমি তো কোনও পক্ষেই ছিলাম না। পুলিশদের পানি খাওয়ানোর পরও তারা আমাকে ও আমার মেয়েকে পিটিয়েছে। আমার ছেলে এগিয়ে এসে আমার অসুস্থতার কথা বললে তারা তাকেও মারে। ওসি নিজেই লাঠি দিয়ে আমাদের পিটিয়েছে। আমার হাতের হাড় ফেটে গেছে। চিকিৎসা নেতে গেলে আমাকে আটক করে। পরে সমঝোতার শর্তে রাতে ছেড়ে দেয়।’ 

রায়গঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল ওয়ালিদ জানান, পুলিশ একপক্ষ নিয়ে নির্বিচারে নারীদের ওপর হামলা করেছে। আহত নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের আটক করে থানায় নিয়েছে। এলাকাবাসী এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করলে আটককৃতদের এক রকম জিম্মি করে সমঝোতার শর্তে ছেড়ে দেয়। চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাতে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের মধ্যস্থতায় অভিযোগ না করার শর্তে আটকদের ছেড়ে দেন ওসি। আমরা নারীদের ওপর পুলিশি হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসে আপাতত বিষয়টি মিমাংসা করেছি। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরে আবার বসে বিষয়টি চূড়ান্ত মিমাংসা করা হবে।’






নাগেশ্বরী থানার ওসি রওশন কবীর অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জমি নিয়ে বিরোধে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ওই নারী-পুরুষরা আহত হয়েছে। পুলিশ সংঘর্ষ নিরসনে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছে। আমি কাউকে আঘাত করার প্রশ্নই আসে না।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন,‘উভয় পক্ষের সংঘর্ষ ভেঙে দিতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কায় কেউ পড়ে গিয়ে কেউ আঘাত পেতেই পারে। কাউকে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া হয়নি। আমরা মামলা নিতে চেয়েছি। তবে উভয় পক্ষের সম্মতিতে উপজেলা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সমঝোতার সিদ্ধান্ত হওয়ায় আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’


পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘উভয় পক্ষের হামলায় কয়েকজন নারী-পুরুষের আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে নারীদের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। এরপরও কেউ অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’