রংপুর সিটি করপোরেশনে কোটি টাকা আত্মসাৎ: দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

222রংপুর সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক শাখায় কোটি টাকা আত্মসাতের  অভিযোগ উঠেছে। করপোরেশনের রোড রোলার, এক্সক্যাভেটর, হুইল ড্রেজার, ছোট ডাম্পার, বড় ডাম্পারসহ সর্বাধুনিক যান্ত্রিকসামগ্রী ভাড়া দেওয়ার নামে এই টাকা লোপাট করা হয়েছে। এগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে, অথচ সেই অর্থ করপোরেশনের তহবিলে জমা হয়নি।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওবার সুপারিশ করেছে। সেইসঙ্গে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫শ’ টাকা দায়ীদের কাছ থেকে আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে একমাস অতিবাহিত হওয়ার পরও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া মেয়রের ভাগিনা বলে পরিচয়দানকারী রবিউল ইসলাম সুমনকে যান্ত্রিক শাখার অফিস সহকারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে রেজাউল করিম রাজুকে একই শাখায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর সুমন নিজেকে মেয়রের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে যান্ত্রিক শাখায় একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। সিটি করপোরেশনের জন্য সরবরাহ করা সর্বাধুনিক রোড রোলার এক্সক্যাভেটর, হুইল ড্রেজার, টেইলার, ছোট ডাম্পার, বড় ডাম্পারসহ অন্যান্য যান্ত্রিকসামগ্রী ভাড়া দেওয়ার নামে গত ৭-৮ মাসে কোটি টাকারও বেশি অর্থ করপোরেশনের তহবিলে জমা না দিয়ে পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর যান্ত্রিক শাখার সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান ৩৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠালে নড়ে চড়ে বসেন তারা। ঘটনা তদন্তে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেনকে প্রধান এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আযম ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন মেয়র।

তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৬ দফা সুপারিশ নামা তৈরি করে মেয়রের কাছে পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়, কার্যাদেশ ব্যতীত ইক্যুপমেন্ট, রোলার, যানবাহন ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট চালকরাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। অপরদিকে, যান্ত্রিক শাখার অফিস সহকারী রবিউল ইসলাম সুমন ও উপসহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম রাজিব কোনও টাকা আদায় ছাড়ায় যানবাহন, রোলারসহ ইক্যুপমেন্ট ভাড়া ও ব্যবহারে চালকদের সহযোগিতা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সেই সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে অনাদায়ী ভাড়া বাবদ ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫শ’ টাকা আদায় করার সুপারিশ করেছে কমিটি। সব মিলিয়ে কোটি টাকা করপোরেশনের তহবিলে জমা না দিয়ে লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি।’ এর বাইরে কোনও কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

অপরদিকে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। এ ব্যাপারে কোনও আপস বা শিথিলতা নয়।’