দুই ভাষা সৈনিকের বাড়িতে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক

লালমনিরহাটের দুই ভাষা সৈনিকের বাড়িতে গিয়ে তাদের হাতে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা তুলে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফরসহ কর্মকর্তারা। এর আগে রাতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ বাহিনী, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদান করা হয়।

রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাটে এ দুই ভাষা সৈনিকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন জেলা প্রশাসসক। হাতে তুলে দেন ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার হিসেবে জেলার কাকিনায় তৈরি তাঁতের দুইটি শাল।

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস এলাকার বাসিন্দা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সৈনিক মো. জহির উদ্দিন আহমেদের হাতে প্রথমে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা তুলে দেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাশেদুল হক প্রধান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর টিএম রাহসিন কবিরসহ অন্য কর্মকর্তারা।

ভাষা সৈনিক জহির উদ্দিন আহমেদের বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক

এই প্রথম জেলা প্রশাসনের ৮টি গাড়ির একটি বিরাট বহর তার বাড়ির উঠানে দেখে ভাষা সৈনিক জহির উদ্দিন আহমেদ তাকে সম্মান জানানোয় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সম্মান জানানোয় সন্তোষ প্রকাশ করে ভাষা সৈনিক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই প্রথম জেলা প্রশাসন আমার মতো একজন নগন্য ব্যক্তির বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে। এতে আমরা গর্বিত। এজন্য সরকারের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। তবে আমার জীবনের শেষ চাওয়া যেন ক্যান্সার গবেষণায় আমাকে সরকার কাজে লাগায়।’

এরপর জেলা প্রশাসক আবু জাফর নেতৃত্বাধীন সঙ্গীরা যান লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের খাতাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ভাষা সৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানীর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে একইভাবে তার হাতেও ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার তুলে দেন।

অপর ভাষা সৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানীও জেলা প্রশাসক আবু জাফরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘সর্বত্র যেন বাংলা ভাষার ব্যবহার করা হয়। এতে করে যাঁরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে। কেননা, পৃথিবীতে একমাত্র বাংলা ভাষার জন্যই লড়াই হয়েছে। অনেককেই জীবন দিতে হয়েছে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘যাঁদের জন্য আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি তাঁদের প্রতি সম্মান জানাতেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা জানিয়েছি। এতে বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও মমত্ববোধ বোঝাতে জেলা প্রশাসনের কর্মরত নবীন কর্মকর্তাসহ সকলকে সাথে নিয়ে লালমনিরহাটের জীবিত দুই ভাষা সৈনিক জহির উদ্দিন আহমেদ ও আব্দুল কাদের ভাসানীর বাড়িতে গিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। আমরা সেই একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ভাষা সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানাতে তাদের বাড়িতে এসেছি।’