রংপুরে চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট

রংপুরে কোরবানি পশুর চামড়া নিয়ে অরাজকতা তৈরি হয়েছে। চামড়ার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দামে আড়তদাররা চামড়া কিনছে না বলে অভিযোগ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। সিন্ডিকেট চক্রের কারণে হাজার হাজার চামড়া ফেলে দিয়েছেন অনেকে। অনেকে আবার মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন। 

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কিনে নগরীর প্রধান আড়ৎ শাপলা চত্বর এলাকায় নিয়ে মধ্য রাত থেকে অপেক্ষা করলেও, সেগুলো কেনেননি আড়তদাররা।

রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য সিন্ডিকেট চক্র দায়ী। তারা বাণিজ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া মূল্য উপেক্ষা করে তার ইচ্ছামতো দামে চামড়া কিনে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেছেন।

কেনা দামও বলছেন না আড়তদাররা

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সরেজমিন রংপুরের প্রধান চামড়ার আড়ৎ শাপলা চত্বরসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত গরুর চামড়া নিয়ে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা আড়তগুলোর সামনে বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। কিন্তু আড়তদাররা চামড়া কেনার কোনও আগ্রহ দেখাননি। আর কিনতে চাইলেও ফুট হিসেবে নয়, গড়ে ৩০০ টাকার বেশি দরে চামড়া কিনতে রাজি হননি তারা। 

রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে দেড়শ চামড়া নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, ঢাকার মধ্যে ৫০ টাকা ফুট দরে এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ টাকা ফুট দরে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সেই হিসাবে মাঝারি গরুর চামড়া ৮০০ থেকে হাজার টাকা, বড় গরুর চামড়া দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দাম হওয়ার কথা। গড়ে চার থেকে ৫০০ টাকা দরে চামড়া কিনেছেন তিনি। গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মোট সাড়ে পাঁচশ টাকা। কিন্তু আড়তদাররা ৩০০ টাকার বেশি দামে চামড়া কিনতে রাজি হচ্ছে না। ফলে তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান দিতে হবে। 

একই কথা জানান মিঠাপুকুরের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আলেফ মিয়া। তিনি বলেন, গড়ে ৫০০ টাকা দরে পশুর চামড়া নিয়ে আড়তে এসেছেন। কিন্তু আড়তদাররা চামড়া নিচ্ছেন না।

রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়ার চামড়া ব্যবসায়ী সাফিন ও সিও বাজারের সহানুল জানান, তারা ৩০০ টাকা দামে চামড়া কিনে এনেছেন। কিন্তু তাদেরকে কেনা দামও বলছেন না আড়তদাররা।

সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষুব্ধ রংপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা

এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানি পশুর চামড়া কেনার কোনও ব্যবসায়ী না আসায় অনেকে ফেলে দিয়েছেন। অনেকে আবার স্থানীয় মাদ্রাসাগুলোতে বিনে পয়সায় দিয়ে এসেছে।

এ ব্যাপারে চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লতিফ খান ঢাকার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দায়ী করে বলেন, তারা দাম নির্ধারণ করে না দেওয়ায় সরকার নির্ধারিত দরে চামড়া কিনতে পারছেন না।

আড়তদার শরিফুল ইসলাম জানান, সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও অর্থের অভাবে কিনতে পারছেন না। প্রতি বছরের মতো পুরনো অজুহাত ‘পাওনা টাকা পাওয়া যায়নি’ বলে জানান।