দাম না পেয়ে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এবার বিপুল পরিমাণ কোরবানির প্রাণীর চামড়া সড়ক-ফুটপাতে ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটে। তারপরও চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলা পর্যায়ে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে এবার ৭ লাখ ৮১ হাজার ৮৩১টি প্রাণী কোরবানি দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ছিল গরু-মহিষ ৫ লাখ ২৪ হাজার ৪৯০টি, ছাগল ও ভেড়া ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৫টি।
তিনি বলেন, ‘নগরী ও জেলার ১৫ উপজেলা পর্যায়ে মাদ্রাসা, এতিমখানা লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে কোরবানির প্রাণীর চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া ৫ লাখের বেশি এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংরক্ষণ করেছে ৫৫ হাজার ৭৮০টি।’
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৫ উপজেলায় এবার ৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৫১টি কোরবানির প্রাণীর চামড়া সংগ্রহের পর সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩০০টি এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১টি চামড়া সংগ্রহের পর সংরক্ষণ করা হয়েছে। চামড়াগুলোর মধ্যে আছে– ৩ লাখ ৫২ হাজার ৩৫১টি গরুর, ১০ হাজার ৫০০টি মহিষের এবং ৫২ হাজার ৫০০টি ছাগলের।’
শনিবার (৭ জুন) সকালে কোরবানির পর থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করতে শুরু করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সংগৃহীত চামড়া নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর আতুরার ডিপো এলাকার চামড়ার আড়তে। তবে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা প্রায় ১০ টন চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৬২০টি চামড়া পচিয়ে ফেলেছেন।’
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চামড়া সংরক্ষণের জন্য মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হয়।
এদিকে, চামড়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে হতাশ। রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা মমতাজ উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘আমরা ৩১০টি চামড়া বিক্রি করতে আতুরার ডিপো এলাকার আড়তে যাই। তখন রাত সাড়ে ৮টা। তখনও কোনও আড়তদার চামড়া কেনায় আগ্রহ দেখাননি। শেষ পর্যন্ত ৩১০টি চামড়া ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। প্রতিটি চামড়া ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এ চামড়াগুলোর ট্রাক ভাড়া, শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা।’
স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রামে ট্যানারি শিল্প ছিল ৩০টি। স্বাধীনতার পরও ২২টি টিকে ছিল। ৮০-৯০-এর দশকের পর ধুঁকে ধুঁকে সব কটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে রিফ লেদার লিমিটেড নামে একটি ট্যানারি চালু রয়েছে।
রিফ লেদারের পরিচালক মোখলেছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশি দামে বিক্রির আশায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করে কম দামে বিক্রি করেছেন। এতে লোকসানে পড়তে হয়েছে তাদের। একইভাবে চট্টগ্রামে একসময় ১০০ থেকে ১৩০ জন আড়তদার ছিল। বর্তমানে তা কমে ২৮ থেকে ৩০ জন আছেন। তাদের একটা সক্ষমতা আছে। এসব চামড়া প্রসেস করতে লোকবল প্রয়োজন, রাখার জন্য স্থান প্রয়োজন। পাশাপাশি চামড়া কিনতে পর্যাপ্ত অর্থ প্রয়োজন। আড়তদারদের নির্দিষ্ট টার্গেট শেষ হলে তারা চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাবেন না। এ কারণে উপজেলা এবং মাদ্রাসাগুলোতে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে চামড়া নষ্ট হওয়া কিংবা কম দামে বিক্রির পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।’