‘রোহিঙ্গা’ বলায় মাইক্রোচালককে পিটিয়ে হত্যা!

দিনাজপুরের হিলিতে ‘রোহিঙ্গা’ সম্বোধন করায় ইলিয়াস হোসেন (৩৪) নামের এক মাইক্রোবাসচালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৪ জুলাই) সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড় সংলগ্ন মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে কয়েকজন যুবক ইলিয়াস হোসনকে মারধর করে ফেলে রেখে যান। আজ সকালে বিরামপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ইলিয়াস হিলির পাইকপাড়া গ্রামের মৃত মহসিন আলীর ছেলে। হিলি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাইক্রোবাস চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

এদিকে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে স্থানীয় কার ও মাইক্রোবাসচালক সমবায় সমিতি আগামীকাল সকালে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।

ইলিয়াসের সহকর্মীরা জানান, হিলির বৈগ্রাম এলাকার আকতারুজ্জামানকে স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন কথা বলে উত্ত্যক্ত করতো। এতে খুব রাগ করতেন তিনি। অন্যদের মতো ইলিয়াসও তাকে ইয়ার্কি-ফাজলামি করতেন। ঈদের পর দিন ইলিয়াস গ্রামের বাড়ি পাইকপাড়া থেকে হিলিতে আসছিলেন। পথে বৈগ্রামের আক্তারুজ্জামানকে ‘রোহিঙ্গা’ বলে সম্বোধন করেন তিনি। এতে আকতারুজ্জামান ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তাড়া করেন।

বাড়ি হিলিতে স্বজনদের কাছে বিষয়টি জানান আকতারুজ্জামান। এরপর কয়েকজন যুবক মাইক্রোস্ট্যান্ডে এসে ইলিয়াসকে মারধর করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে তারা চলে যান। এসময় তার সহকর্মীরা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠান। কিন্তু অর্থাভাবে তাকে বাইরে না নিতে পারায় পার্শ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে চিকিৎসা চালাচ্ছিলেন। সেখানে আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইলিয়াস হোসেন কী একটা বিষয় নিয়ে একজনের সঙ্গে দুষ্টুমি করতেন। সেই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন মিলে গত বৃহস্পতিবার মাইক্রোবাসস্টান্ডে গিয়ে তাকে ধরে পা উপরের দিকে মাথা নিচের দিক করে ফেলে দেয়। এতে তার মাথার শেষের দিকে মেরুদণ্ডের হার ভেঙে যায়।পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, কর্তব্যরত চিকিৎসক ‘এটা অপারেশন করলে ভালো হবে’ বলে তার পরিবারকে জানান। সেজন্য তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। কিন্তু তারা তাকে দিনাজপুর না নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ফেরদৌস ওয়াহিদ।