পঞ্চগড়ে এক ঘণ্টা থাকলে দুই ঘণ্টা থাকে না বিদ্যুৎ 

পঞ্চগড়ে দুদিন ধরে চলছে অসহনীয় লোডশেডিং। একবার চলে গেলে দেড়-দুই ঘণ্টা পর আসে। এক ঘণ্টা থেকে আবার দুই ঘণ্টার জন্য যায়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দিনে-রাতে এভাবে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার মানুষ।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পঞ্চগড় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ ১০ মেগাওয়াটের দুটি ট্রান্সফরমারে ধারণ করা হয়। এই দুটি ট্রান্সফরমার থেকে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। 

মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) দুপুরে একটি ট্রান্সফরমারের এইচটি বুস জ্বলে যায়। তখন থেকে বুধবার (০৪ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত ১৫-২০ বার বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়েছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় জনবল, আধুনিক উপকরণসহ পরিবহন সংকটের কারণে জেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। এ ছাড়া কারণে-অকারণে দীর্ঘমেয়াদি লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজ সমস্যা, কল-কারখানায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, ভৌতিক বিল, মিটার রিডিং না দেখে বিল, বিদ্যুৎ চুরি, আবাসিক লাইনে অটোচার্জিং করে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অভিযোগ জানানোর জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল, টেলিফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করে না কেউ।

শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ গ্রাহক হারুন উর রশীদ বলেন, লাইনে নিয়মিত সংস্কার ছাড়াও কারণে-অকারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। বিদ্যুতের এই লুকোচুরি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। অভিযোগ দিতে গেলে নেসকোর অফিস কর্মকর্তারা নেন না।

জেলা শহরের ডোকরোপাড়া এলাকার নাজমা আখতার বলেন, গত দুদিন পানি না থাকায় রান্নাবান্না করতে পারছি না। দিনে রাতে ১৫-২০ বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। গরমে অতিষ্ঠ আমরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড়ের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের বলেন, বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমেছে। যান্ত্রিক সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু গ্রাহকদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। নেসকোর কর্মকর্তাদের অদক্ষতা দুর্ভোগের অন্যতম কারণ।

পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন বলেন, বিদ্যুতের যাওয়া-আসা এবং লো-ভোল্টেজ সমস্যার কারণে পৌরসভার পানির পাম্প সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পানি সরবরাহে অসুবিধা হচ্ছে। পানির জন্য পৌরবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

জেলা নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, পঞ্চগড় শহর ১, পঞ্চগড় শহর ২, বিসিক ফিডার, কমলাপুর ফিডার, জগদল ফিডার ও ভজনপুর ফিডারে মোট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ২৬ হাজার ৫৩১ জন এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকের সংখ্যা চার হাজার ১৪৯ জন। ৩৩ হাজার কেভি সঞ্চালন লাইনের ১০ কেভির দুটি ট্রান্সফরমার দিয়ে ছয় ফিডারে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। একটি ট্রান্সফরমারের যন্ত্র পুড়ে যাওয়ায় অন্যটি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। একটি ট্রান্সফরমার বন্ধ থাকায় এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে ছয় ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ রংপুরের লোকজন ট্রান্সফরমার যন্ত্রটি মেরামতের চেষ্টা করছেন। মেরামত সম্পন্ন হলে ছয় ফিডারে একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।