৩০ লাখ টাকার সেতুতে মই বেয়ে উঠতে হয়

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের হযরতপুরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও দেড় বছর ধরে সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয়রা। সেতুর দুই পাশে রাস্তা না বানিয়ে নির্মাণকাজ শেষ দেখিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছ থেকে বিল নিয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বর্ষায় সেতুটি পানিতে তলিয়ে থাকে আর শুকনো মৌসুমে মই বেয়ে সেতুতে উঠে তারপর যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবে কোনও যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে হযরতপুরসহ আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মিঠাপুকুর উপজেলা পিআইও অফিসের অধীনে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর দুই পাশে রাস্তা নির্মাণ না করেই চলে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে সেতুটিতে ওঠা যায় না। সেতুতে উঠতে ব্যবহার করতে হচ্ছে মই। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে একাধিকবার জানিয়ে কোনও কাজ হয়নি।

স্থানীয় মির্জাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাফর আলী জানান, তিনি নিজে কয়েকবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানালেও কোনও প্রতিকার হয়নি। যদি মানুষ যাতায়াত করতে না পারে তাহলে সেতুটি নির্মাণ করার কী প্রয়োজন ছিল? দুই পাশে মাটি ভরাট না করে, রাস্তা না বানিয়ে, সেতুর সঙ্গে সংযোগ করে না দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে পুরো টাকা তুলে নিয়ে গেলো বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে হযরতপুর গ্রামের আবুল হোসেন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘এ সেতু নির্মাণ করে আমাদের তো কোনও উপকার হয়নি। যদি দুই পাশে মাটি ভরাট করে রাস্তা বানিয়ে সেতুর সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হতো তাহলে আমরা যাতায়াত করতে পারতাম। এখন ওই সেতু আমাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এ বিষয়ে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, ‘প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ সেতুর দুই পাশে রাস্তা নেই। বিষয়টি পিআইওকে বলেছি। তারা কোনও পদক্ষেপ না নিলে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সরকারি বরাদ্দ পেলে রাস্তা নির্মাণ করবো।’

বিষয়টি স্বীকার করে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আশপাশের এলাকায় মাটি না পাওয়ায় সেতুর রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে মাটি ভরাট করে মানুষ ও যানচলাচল উপযোগী করা হবে।’ সেতুর দুই পাশে রাস্তা নির্মাণ না করেই ঠিকাদারকে পুরো বিল দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগের কোনও সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আখতার হোসেন বলেন, ‘আমি তিন দিনের মধ্যে সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট ও রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা নির্মাণের কথা বলেছি।’