‘চিকিৎসক হয়ে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা করবো’

নাজমুস সাকিব রাহাতের ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে তার। ডেন্টাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পঞ্চগড় সদরের চাকলাহাট ইউনিয়নের শিংরোড রতনিবাড়ি গ্রামের রাহাত ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জন (বিডিএস) কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন। 

বিডিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষার আগের সব রেকর্ড ভেঙে এবং ৯৫ ভাগের বেশি নম্বর পেয়ে ভর্তি পরীক্ষার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তার সাফল্যে বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন গর্বিত। এলাকায় সবার মুখে মুখে এখন রাহাতের নাম। গত রবিবার সরকারি ও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট সমূহে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বিডিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে জাতীয় মেধা তালিকায় প্রথম হন।

শিংরোড রতনিবাড়ি গ্রামের হোমিও চিকিৎসক মো. সোলেমান আলী ও গৃহিণী ইসমত আরা বেগমের চার ছেলে। বড় ছেলে ইব্রাহীম খলিল শিক্ষক, দ্বিতীয় ছেলে রাকিবুল হাসানও শিক্ষক, তৃতীয় ছেলে রায়হান কবীর হাসপাতালে চাকরি করেন, ছোট ছেলে রাহাত চিকিৎসক হওয়ার পথে হাঁটছেন। 

রাহাতের বাবা মো. সোলেমান আলী বলেন, ‘রাহাত বাড়ির পাশে রতনিবাড়ি কিন্ডারগার্টেনে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। ২০১৮ সালে পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ এবং ২০২০ সালে সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা পাস করে। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল রাহাত।’

নাজমুস সাকিব রাহাত বলেন, ‘বিডিএস কোর্সে ৩৯ হাজার ১৩০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করে ২৬ হাজার ৭২৬ জন। এদের মধ্যে মেধা তালিকা ও কোটা ভিত্তিতে ৫৪৫ জনকে সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও আট মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়। ৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় ২৯৫ পেয়ে দেশসেরা নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মাত্র ১ নম্বরের জন্য মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায় কোনও আক্ষেপ নেই। যেখানেই হোক আমার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। তাতেই আনন্দিত। তবে পরীক্ষার আগে অসুস্থ হয়ে না পড়লে আরও ভালো করতে পারতাম। আমার সফলতায় বাবা-মা, শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজনের প্রেরণা ও অবদান রয়েছে। তবে ভালো ফলের পেছনে বড় ভাই ইব্রাহীম খলিলের অবদান সবচেয়ে বেশি। ভাই আমার প্রথম শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে আমার লেখাপড়ার বিষয়ে বড় ভাই সবসময় খোঁজখবর নিতেন, পরামর্শ দিতেন। ’

রাহাত বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। গ্রামের দরিদ্র মানুষ চিকিৎসাবঞ্চিত হন। চিকিৎসক হয়ে গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করবো, তাদের পাশে দাঁড়াবো।’

রাহাতের বাবা সোলেমান আলী বলেন, ‘ছোট ছেলের ভালো ফলাফলের খবর পেয়ে আনন্দে চোখে পানি চলে আসে। আমার সব ছেলে মেধাবী। কেউ সরকারি চাকরি করে, কেউ শিক্ষকতা। ভবিষ্যতে ছোট ছেলে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে, মানুষের সেবা করা মহৎ কাজ। সন্তানদের জন্য আমি গর্বিত।’