প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটের আগেই ‌‌‘ভোট’ 

ভোটের আগেই ভোট দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একক মেম্বারপ্রার্থী বেছে নিয়েছেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানীপাড়া গ্রামবাসী। শনিবার (২ অক্টোবর) মেম্বার পদে এককপ্রার্থী বাছাইয়ে এ ভোটগ্রহণ হয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয়। সেদিনই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যতিক্রমী এ ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। 

জানা যায়, সমঝোতা না হওয়ায় ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানীপাড়া গ্রামের চার জন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনে একজনকে বেছে নিতে ভোটের আগে ভোট দেন ভোটাররা। প্রার্থী বাছাই করতে সরকারি নির্বাচনের আদলেই ভোটের আয়োজন করা হয়। ওই গ্রামের হায়াতুন নবীর বাড়ির সামনে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

ভোট কেন্দ্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। সরকারি নির্বাচনের আদলে ভোটকেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, নিরাপত্তা কর্মী, ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, গোপন বুথ, ভোটের জন্য সিল সবই ছিল। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ছিলেন চার প্রার্থী, তাদের কর্মী সমর্থক এবং ভোটাররা।

ব্যতিক্রমী আয়োজন দেখতে অন্য এলাকার উৎসুক মানুষেরও কমতি ছিল না। গ্রামের চার জন প্রার্থী যথাক্রমে মো. আব্দুল মোতালেব, মো. তোয়াবুর রহমান, মো. আব্দুর রহমান ও মো. শাহীনুর রহমান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চার জন প্রার্থীর নাম ও ছবি সম্বলিত ব্যালটপেপার ছাপানো হয় ভোটের আগের দিন। ব্যালট পেপারের মাধ্যমে গোপন বুথে সিল মেরে ভোট দেন ভোটাররা। লাইনে দাঁড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন ভোটাররা। শান্তিপূর্ন ভোটগ্রহণের পর শুরু হয় গণনা। গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার রবিউল ইসলাম। 

নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রার্থী ও ভোটাররা জানান, একই গ্রামের চার জন ব্যাক্তি ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচন করতে চান। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একইসঙ্গে ওই চার পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। গ্রামের ভোটাররাও বিভাজন হয়ে যায়। দ্বন্দ্ব নিরসনে গ্রামের শিক্ষিত যুবকরা উদ্যোগ নেন। তারা অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র বানিয়ে গ্রামের ভোটারদের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ভোটের আয়োজন করেন। শর্ত থাকে যে প্রার্থী জয়ী হবেন, আগামী নির্বাচনে গ্রামবাসী একক প্রার্থী হিসেবে তাকেই সমর্থন দেবেন।

পঞ্চগড় এম আর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার, বোদা পাথরাজ সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক বাবু প্রথম ভোটার হিসেবে ভোটের আগেই ভোট দিয়েছেন। তারা জানান, ভোটগ্রহণ ও ভোটপ্রদান পদ্ধতি আমাদের জানা ছিল না। এখানে ভোট দিয়ে তা জানলাম। প্রথম ভোট দিয়ে ভালোই লেগেছে।
 
গ্রামের বৃদ্ধ সফিকুল ইসলাম (৫৬) বলেন, ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করতেই আমরা ভোটের আগে ভোট দিয়েছি। আমরা আমাদের গ্রাম থেকে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে জিতিয়ে আনবো। 

নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা রবিউল ইসলাম বলেন, প্রার্থীরা সবাই আমাদের চাচা-ভাই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের ঘটনা ঘটুক, এমনটা আমরা চাইনি। তাই ভোটের আগেই ভোট করে একক মেম্বারপ্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। 
 
ঘোষিত ফলাফলে আব্দুল মোতালেব পান ৪৯ ভোট, মো. তোয়াবুর রহমান পান ৪৬ ভোট, মো. আব্দুর রহমান পান ৩০ ভোট এবং মো. শাহীনুর রহমান পান ১৭ ভোট। ১২টি ভোট নষ্ট হয়। 

নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, গ্রামবাসী আমাকে সমর্থন দিয়েছে। নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে কাজ করবো। এলাকার প্রতিটি বিচার শালিস ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুষ্ঠুভাবে অনিয়ম ছাড়াই সম্পন্ন করবো। 

নির্বাচন অফিসের সূত্রমতে, ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোটার এক হাজার ৭৭৬ জন। আর কেরানীপাড়া গ্রামের মোট ভোটার প্রায় ২২৫ জন। এরমধ্যে ১৫৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।