কাঁটাতারের বাধা মানেনি ভালোবাসা-আবেগ

হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আজ মহানবমী। এ উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের দুই পাশে দুই দেশের দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। কেউ এসেছেন ভারতীয় প্রতিমা দেখতে, কেউবা বাংলাদেশি প্রতিমা দেখতে। অনেকে দীর্ঘদিন দেখা না হওয়া ওপারের স্বজনদের দেখতে এসেছেন। যদিও দেখা করার সুযোগ নেই, তারপরও দূর থেকে হাত নেড়ে কথা বলে ফিরে যাচ্ছেন তারা।

দুর্গাপূজার সময় প্রতিদিন সকাল-বিকাল ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হিলি সীমান্তে আসেন দর্শনার্থীরা। বিজিবি-বিএসএফের অনুমতি না মেলায় সীমান্তে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফিরছেন তারা। প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন এখানে। দর্শনাথীদের পদচারণায় হিলি সীমান্ত মিলন মেলায় পরিণত হয়।

বাংলাদেশে বসবাসরত স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে হিলি সীমান্তে আসেন ভারতীয় নাগরিক মালতি রানী। 

হিলি সীমান্তে দুই দেশের দর্শনার্থীদের ভিড়

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভাই ভাতিজা, দাদা-বউদি সবাই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থেকে সীমান্তে এসেছে। আমাদের বাড়ি বালুরঘাটের কুচিলায়। ২০ বছর ধরে তাদের সঙ্গে সেভাবে দেখা হয়নি। পূজার সময় সীমান্তে নাকি দেখা করতে দেয়। এজন্য আজ এসেছি। বিএসএফ ও বিজিবিকে অনেক অনুরোধের পর তাদের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছি। এতদিন পর দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে।

তবে সবাই মালতি রানীর মতো সুযোগ পাচ্ছেন না। সীমান্তে আসা দর্শনার্থী পলাশ কুমার বসাক জানান, আগে শুনেছিলাম সীমান্তের শূন্যরেখায় দাঁড়িয়ে দুই দেশের মানুষের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার সুযোগ মেলে। এ জন্য হিলি সীমান্তে এসেছি। কিন্তু বিজিবি আমাদের সীমান্তের শূন্যরেখায় তো যেতেই দিচ্ছে না। তাই সীমান্তের পাশে রেললাইনের কাছ থেকে দাঁড়িয়ে চোখের দেখা দেখে এবং সবাই মিলে ছবি তুলে ফিরে যাচ্ছি।

শতাব্দী রায় নামে এক দর্শনার্থী বলেন, প্রতিবছর দুর্গাপূজার অপেক্ষায় থাকি, সীমান্তের কাছে দাঁড়িয়ে ভারতীয় প্রতিমার কিছু অংশ হয়তো দেখতে পারবো। আবারও স্বজনদের সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ মেলে। এ কারণে এবারও হিলি সীমান্তে এসেছি। ভারতে আমার নানির বাসা। ইচ্ছা থাকে প্রতিবছর তাদের সঙ্গে দেখা করার। দেখাও হয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে করোনার কারণে সীমান্ত বন্ধ। তাই দেখাও হচ্ছে না। এবার বিজিবি-বিএসএফ সুযোগ না দেওয়ায় তাদেরকে সামনাসামনি দেখতে পারছি না।

হিলি সীমান্তে ভারতীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে আসা সঞ্জয় সেন বলেন, সীমান্তে এসেছিলাম ভারতীয় প্রতিমা দেখতে এবং ভারতে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এখানে তো ওইরকম কোনও সুযোগ নেই। ওপারে যাওয়ার ও আসার তেমন কোনও সুযোগ নেই। সীমান্তের ভারত অংশে অনেক মানুষ এসেছে, তারা দাঁড়িয়ে এপাশে থাকা স্বজনদের দেখছে, ইশারায় কথা বলছে।

শুধু দূর থেকে ইশারায় কথা বলে ফিরে যাওয়া

তিনি বলেন, আমরা চাই, পূজার সময় অন্তত একটা দিন অথবা কিছু সময়ের জন্য হলেও সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক। সীমান্তের ওপারে আমাদের অনেক স্বজন রয়েছে। তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা হয়নি। একটু সুযোগ পেলে তাদের সঙ্গে দেখা করে মন খুলে কথা বলতে পারতাম। এটা যদি একটা শৃংখলার ভেতরে বা কোনও সেক্টরের ভেতরে হতো তাহলেও অসুবিধা হতো না।

বিজিবির হিলি আইসিপি চেকপোস্ট ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার ইয়াসিন আলী জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ হিলি সীমান্তে আসছেন। কেউ ভারতে তাদের স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে, আবার কেউবা সীমান্তের শূন্যরেখা ঘুরতে আসছেন। তবে অনুমতি না থাকায় কাউকে শূন্যরেখায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও মানবিক দিক বিবেচনা করে দু-একজনকে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে রেললাইনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সীমান্ত পরিদর্শন ও স্বজনদের দেখছেন।