গাইবান্ধার অচেনা প্রাণীটি খেঁকশিয়াল, ধারণা বন‌্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের

গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলায় সেই ‘অচেনা প্রাণী’র আক্রমণে নতুন করে আরও তিন জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে প্রাণীটির আক্রমণে গত দেড় মাসে আহতের সংখ‌্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ফেরদৌস মুন্সী নামে এক মসজিদের ইমাম।

গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নতুন করে আক্রমণের শিকার হয়েছেন– কিশামত কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের আফসার আলী (৫০), খামার বালুয়া গ্রামের আবদুল হালিম (৪৫) এবং দুলালের ভিটা গ্রামের ছব্বির শেখ (৫২)। তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ আছেন।

এদিকে, অচেনা প্রাণীর আক্রমণের শিকার গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছেন ঢাকা এবং রাজশাহী থেকে আসা বন‌্যপ্রাণী ব‌্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাসহ বন‌্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ টিম। গত দুই দিন ধরে কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড় ও জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে প্রাণীটিকে শনাক্তের চেষ্টা করেন তারা।

বুধবার দুপুরেও তালুক কেঁওয়াবাড়িসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা এবং বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ টিমের সদস‌্যরা। এ সময় নিহত ও আহতদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ‌্যে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ প্রাণীটি সম্পর্কে ধারণা নেন তারা। তাদের সঙ্গে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের একটি পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তীরের সদস‌্যরা অংশ নেন।

তবে অচেনা এই প্রাণীকে জলাতঙ্কগ্রস্ত খ্যাঁকশিয়াল বলে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করছেন ঢাকা থেকে আসা বন‌্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ কামরুদ্দীন রাশেদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাণীটি অচেনা জন্তু কিংবা কোনও হিংস্র প্রাণী নয়, প্রাণীটি মূলত জলাতঙ্কগ্রস্ত খ্যাঁকশিয়াল। বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ এলাকায় দুই প্রজাতির খ্যাঁকশিয়ালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে এসব খ্যাঁকশিয়াল জলাতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার শরীরের পরিবর্তন ঘটে। হিংস্র মনোভাব থাকায় সুযোগ পেলেই তারা মানুষের ওপর হামলা করে বসে।’ তবে প্রাণটিকে নিয়ে এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পরিদর্শন টিমে অংশ নেন– রাজশাহী বন‌্যপ্রাণী ‌ব‌্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, বন্যপ্রাণী গবেষক মো. রাশেদ, গাজী সাইফ ও জুয়েল রানা। সে সময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হরিনাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রাকিব হোসেন। 

বর্তমানে অচেনা প্রাণীটির আক্রমণের ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে পলাশবাড়ি উপজেলার ছয়টি গ্রামের মানুষের মধ‌্যে। বর্তমানে ভয়-আতঙ্কে আছেন তালুক কেঁওয়াবাড়ি, হরিনাথপুর, কিশামত কেঁওয়াবাড়ি, খামার বালুয়া, দুলালের ভিটা ও তালুকজামিরা গ্রামের মানুষরা। অনেকে বাইরে লাঠি হাতে চলাফেরা করছেন।

গ্রামবাসী বলছেন, অচেনা প্রাণীটির গায়ের রঙ লাল, সাদা-ধূসর ও শরীরে ডোরাকাটা দাগ আছে। সামনের দুই পা ছোট, মুখমণ্ডল লম্বা এবং লেজ আকারে বড়। ঘটনার পর গ্রামবাসীর মারপিটের শিকার হয়ে এ পর্যন্ত তিনটি শিয়াল মারা গেছে বলেও জানান তারা।

আরও খবর:  ‘অচেনা’ প্রাণীটি শনাক্ত করতে পারেননি বন কর্মকর্তারা