সরিষার লাভেই উঠে আসছে বোরো চাষের খরচ

পঞ্চগড় জেলায় বাড়তি ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষা। সামান্য পরিচর্যা আর অল্প খরচেই লাভ মিলছে ভালো। আমন ও বোরো ধানের মাঝামাঝি সময় হচ্ছে সরিষার চাষ। এ সরিষা তুলেই চাষিরা রোপণ করবেন বোরো। সরিষা বিক্রির টাকাতেই উঠে আসবে বোরো চাষের খরচ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী কৃষিতে জড়িত। আমন ধান উত্তোলনের পরে জমি ফেলে না রেখে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন তারা। পাশাপাশি এসব ক্ষেতে মৌমাছির বাকশো বসিয়ে মধু সংগ্রহ করেও আয় করছেন অনেকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

পঞ্চগড় জেলায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার কৃষকরা প্রায় আট হাজার হেক্টরে বারি-১৪, ১৭ ও ১৮ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে দেবীগঞ্জ উপজেলায়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ আর হলুদ। প্রকৃতির কোনও কন্যা যেন সেজেছে হলুদ বরণ বেশে।

প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় ৬ থেকে ৮ মণ সরিষা

খরচ কম ও রোগ বালাই কম হওয়ায় স্বল্পমেয়াদি ফসল সরিষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। ৬৫-৮০ দিনেই এ ফসল ঘরে তোলা যায়। প্রতি বিঘা আবাদে খরচ মাত্র দুই-আড়াই হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় ৬ থেকে ৮ মণ সরিষা।

গত বছর তিন বিঘায় সরিষা আবাদ করেছিলেন দেবীগঞ্জ উপজেলার মো. রাশেদ। বিঘাপ্রতি ফলন পেয়েছিলেন ৬-৭ মণ। প্রতি মণ বিক্রি করেছিলেন দুই-আড়াই হাজার টাকায়। এবার ৬ বিঘায় চাষ করেছেন। সরিষা বিক্রির টাকাতেই করেছেন বোরোর চাষ। নতুন করে অর্থের যোগান দিতে হয়নি।

তার দেখাদেখি এলাকার আব্দুর রাজ্জাক, হাসানুজ্জামান খোকা, এমদাদুল হক, আব্দুল আউয়াল, কটেশ চন্দ্র রায়, সাদেকুর রহমান রাব্বানী, মো. শাহজামাল, আব্দুস সাত্তারও সরিষা চাষ করছেন।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের যুগিভিটা এলাকার কৃষক সাদেকুর রহমান রাব্বানী জানান, এবার ছয় একরে সরিষার চাষ করেছি। কিছু বিক্রি করি, কিছু নিজের জন্য রেখে দিই। বাসায় রান্নার জন্য তেল কিনতে হয় না।

সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের কুন্দর আলী গ্রামের কৃষিবিদ ও সরিষা চাষী কটেশ চন্দ্র রায় জানান, একসময় সরিষার আবাদ বেশি হতো। গ্রামে গ্রামে কলু (ঘানি) ছিল। সয়াবিন আসায় সরিষার চাষ কমে যায়। খৈলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আবার সরিষা চাষ বাড়ছে।

প্রকৃতির কোনও কন্যা যেন সেজেছে হলুদ বরণ বেশে

সরিষা ক্ষেতে মধু চাষ করছেন সরকারপাড়ার মৌচাষি সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, এবারও মধুর বাকশো রেখেছি। একটা বাকশো থেকে সপ্তাহে ১০ কেজি মধু পাই। সরিষার মধুর ভালো গন্ধ হয়। এলাকার লোকজনই কিনে নেয়।

দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, জেলার মোট সরিষা চাষের অর্ধেকের বেশি দেবীগঞ্জ উপজেলায় হয়। এখানে এবার দুই হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. শাহ আলম মিয়া জানান, দেশে প্রতিবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা পরিমাণ ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত সরিষা থেকে আসে মাত্র পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। আমন ও বোরো আবাদের মাঝে দেশে আবাদযোগ্য প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকে। এতে সরিষার আবাদ করা গেলে ভোজ্যতেল আমদানি কমবে। পাশাপাশি সরিষার উপজাত খৈল থেকেও বাড়তি আয় হবে।

তিনি আরও জানান, ‘আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও কীটনাশক দিচ্ছি।’ ভবিষ্যতে সরিষার চাষ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।