নিজ সন্তানকে অপহরণ-গুমের দায়ে বাবার যাবজ্জীবন

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় নিজের মেয়েকে অপহরণ ও গুমের মামলায় লুৎফর রহমান নামে এক বৃদ্ধের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় লুৎফর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পীরগাছার মকরমপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে রাবেয়া খাতুন ভালোবেসে বিয়ে করেন একই এলাকার আব্দুর রশীদ। এ নিয়ে রাবেয়ার পরিবারের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে রাবেয়ার শ্বশুর হোসেন আলীকে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় রাবেয়ার বাবাসহ তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। মামলায় লুৎফরসহ অন্য আসামিরা নিম্ন আদালতে খালাস পান। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের একমাত্র চাক্ষুস সাক্ষী ছিলেন রাবেয়া খাতুন। এ ঘটনার পর অনেকবার লুৎফর রহমানকে বলেছেন, তার সামনে হোসেন আলীকে হত্যা করা হয়েছে এবং বিষয়টি তিনি উচ্চ আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। ঘটনার পর থেকে লুৎফর রহমান মেয়ে রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

২০০৩ সালের এপ্রিলে কৌশলে রাবেয়াকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পীরগাছা চৌধুরানী বাজারে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যান লুৎফর। সেখানে বেশ কয়েকজন সহযোগী ছিল। কিন্তু বাবার মতলব বুঝতে পেরে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন রাবেয়া। বাধ্য হয়ে লুৎফর রহমান বাসায় নিয়ে আসেন। 

এর এক মাস পর রাবেয়ার কোনও সন্ধান না পাওয়ায় তার ছেলে রাঙ্গা মিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে মায়ের কোনও সন্ধান না পীরগাছা থানায় মামলা করতে যান। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় আদালতে নালিশি মামলা করেন। 

বিচারক মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেয়। পুলিশ তদন্ত শেষে লুৎফর রহমানসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। 

মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেলা শেষে লুৎফর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছে। জরিমানার অর্থ রাবেয়ার ছেলে রাঙ্গাসহ তার সন্তানদের দিতে হবে।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পারিচালনাকারী আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২ এর বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে আসাতিপক্ষের আইনজীবী জহুরুল আলম বলেছেন, লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে কোনও জোরালো সাক্ষ্য নেই। তারা ন্যায্য বিচার পাননি। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।