ঔষধি গাছে স্বাবলম্বী দেড় হাজার পরিবার

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামে চাষ হচ্ছে নানা ধরনের ঔষধি গাছ। এতে প্রায় দেড় হাজার পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহায়তায় এখানে ব্যাপক আকারে চাষ হচ্ছে বাসক, অশ্বগন্ধা, তুলসি ও অর্জুন গাছ। এসব গাছের পাতা ও ডালপালা কিনে নিয়ে যাচ্ছে বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঔষধি গাছ বিক্রি করেই আয় করা সম্ভব কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা। এমনটাই মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ঔষধি গাছের বাজার এখন ৮৩ বিলিয়ন ডলারের। ২০২৬ সাল নাগাদ এ বাজার পৌঁছাবে ১৭৮.৪ বিলিয়ন ডলারে (সূত্র: গ্লোবাল নিউজওয়্যার)। এরমধ্যে শুধু চীন এককভাবে রফতানি করছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঔষধি গাছ। বিশ্বব্যাপী যত ওষুধ তৈরি হচ্ছে তার শতকরা ৩৩ ভাগই আসছে ভেষজ গাছ থেকে।

তুলসি গাছের চাষপীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, ২০১৩ সালে আইপিপি প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ধান-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি ঔষধি গাছ রোপণে কৃষকদের সহায়তা শুরু করে। তারা প্রথমে বাসক গাছ রোপণের পরামর্শ দেন।

পাঁচগাছি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের কৃষক মেহেদুল প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫ জন নারী ও ২০ জন পুরুষ নিয়ে একটি দল গঠন করে সড়কের দুই পাশে বাসক রোপণ করেন। এক বছরের মাথায় এ গাছের পাতা কেনার জন্য একমি, স্কয়ারসহ নামকরা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। চাহিদা বাড়ায় মেহেদুল ও তার দল উৎসাহ পেয়ে আরও বাসক রোপণ করেন।

সরেজমিন পাঁচগাছি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামে কথা হয় মেহেদুলের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘আমাদের দলের সদস্য সংখ্যা এখন ৫০০ ছাড়িয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় মূল সড়কের দুই পাশে বাসক রোপণ শুরু করি। এখন আশপাশের ১০-১২টি গ্রামেও চাষ হচ্ছে। অনেকে বাড়ির পাশের পতিত জমিতেও রোপণ করছেন। এক বছরেই এ গাছ বড় হয়ে যায়।

একই কথা জানান আলতাফ হোসেন, সরোয়ার, আবেদা বেগমসহ অনেকে। তারা জানান, বাসকের পাতা বিক্রি করে দাম ভালো পাওয়া যায়। এর বাইরে ওষুধ কোম্পানিগুলো অশ্বগন্ধা, অর্জুন ও তুলসি লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে চাষিদের।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, এক বিঘায় তুলসি চাষে খরচ ১০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৪০-৫০ হাজার টাকায়। সময় লাগে মাত্র ৩-৪ মাস।

ছাবেরা বেগম জানান, বাসক, অশ্বগন্ধা, তুলসী আর অর্জুন বিক্রি করেই তার দুই ছেলেমেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেরাই গাড়ি নিয়ে এসে কিনে নিয়ে যায়। পাতা বিক্রি করতে কোনও সমস্যা হয় না।

পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া জানান ঔষধি গাছের চাহিদা বাড়ায় ইউনিয়নজুড়ে এখন বাসক, তুলসি, অশ্বগন্ধা আর অর্জুনের ছড়াছড়ি। দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরাও খুশি।