৬৮ বছরের পুরনো ভবনে সাড়ে ৮০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান, ধসে পড়ার শঙ্কা

দেয়াল ও মাথার ওপর ছাদের পলেস্তারা-ঢালাই খসে পড়ছে। ধসে পড়ার শঙ্কাও জেগেছে। স্যাঁতস্যাঁতে আর জরাজীর্ণ ভবনে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। প্রচণ্ড গরম ও মাঝে মাঝে মেঘলা হলেও নেই বৈদ্যুতিক পাখা ও বাতির সুবিধা। না এটা কোনও পরিত্যক্ত ভবনের চিত্র নয়। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। 

দুর্ঘটনার আশঙ্কা আর নানা ভোগান্তি নিয়ে বিদ্যালয়টিতে ৬৮ বছরের পুরনো ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নানা আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা তো বটেই, শিক্ষকরাও পাঠদানে মনোযোগী হতে পারছেন না।

১৯৩৪ সালে সহশিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালে সরকারি করা হয়। প্রায় সাড়ে ৮০০ শিক্ষার্থী আর ৩২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর প্রতিষ্ঠানটিতে ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রও বিদ্যালয়টি। কিন্তু যেকোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জরাজীর্ণ সেমিপাকা ভবনটিও

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৪ সালে স্কুলটিতে একটি পাকা ভবন এবং পরে আরেকটি সেমিপাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দশক পেরিয়ে যাওয়ায় দুইটি ভবনই এখন জরাজীর্ণ। পাকা ভবনটির পলেস্তারা ও ছাদের ঢালাই খসে খসে পড়ছে। ঢালাই খসে গিয়ে ভেতরের রড দৃশ্যমান হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি চুয়ে পড়ছে। ভবনে নেই কোনও বৈদ্যুতিক সংযোগ। একই অবস্থা সেমি পাকা ভবনেরও। সেখানে টিনের চাল ফুটো, স্থানে স্থানে মটকা নেই। চালের আড়া ভেঙে গেছে। স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালে নেই পলেস্তারা। এমন পরিস্থিতিতে ভবনগুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার জন্য উপজেলা কমিটির কাছে আবেদন দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনি ,জুই ও মনিকা বলেন, ‘আমাদের ক্লাস রুমগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করি। ক্লাসে থাকা অবস্থায় পলেস্তারা খসে আমাদের গায়ে, মাথায় পড়ে। এই ভবনে ক্লাস করলে যেকোনও সময় আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, এই বিদ্যালয়ে যেন জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আইয়ুব আলী ও আকতারা বলেন, ‘স্কুলের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কমন রুমও জরাজীর্ণ। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে। আমরাও ভয়ে অনেক সময় বাইরে বসে থাকি।’

kurigram2

প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, ‘পুরাতন জরাজীর্ণ আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ স্কুল পরিদর্শনে এসে নতুন ভবন নির্মাণ প্রয়োজন জানিয়ে একটি ডেমি অফিশিয়াল লেটার (ডিও) দিয়েছেন। আমাদের নতুন ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি। কর্তৃপক্ষ দ্রুত ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা না নিলে পাঠদান কার্যক্রম চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’

উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ‘বিদ্যালয়টির ভবনগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে। নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। স্কুলটির নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’