হারিয়ে যাচ্ছে কাউন, যব ও ঢেমসি

এক সময় ছিল যখন ধান বলতে ছিল আউশ আর আমন। প্রকৃতি নির্ভর চাষাবাদে ফসলের তালিকায় ছিল কাউন, যব ও ঢেমসির নাম। কাউনের পায়েশ, যবের ছাতু আর ঢেমসির পান্তাভাত ছিল ঘরে ঘরে মানুষের শখের খাবার। পরবর্তীতে বিদ্যুতায়ন ও কৃষির ব্যাপক যান্ত্রিকীকরণের হাত ধরে আসে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান। বাড়ে আলু, আম ও লিচুর চাষ। অন্যদিকে আশানুরূপ ফলন ও দাম না পাওয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কাউন, যব ও ঢেমসি। তবে এখন আর ওই সব ফসল চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ নেই।

কৃষি বিভাগ জানায়, জৈষ্ঠ্য মাসে কাউন উৎপাদন হয়। যব উঠে গমের মৌসুমে। আর শীতের শেষে চাষ হয় ঢেমসির। সব ধরনের জমিতে চাষ হয় এসব ফসল। এ বছর জেলায় ২ হেক্টর জমিতে কাউনের আবাদ হয়েছে। জানা যায়, জেলার হাট-বাজারগুলোতে এখনও প্রতিকেজি কাউনের চাল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। ভোজন বিলাসীরা পায়েশ, পিঠা ও নাড়ুর জন্য কিনেন এই দানাদার খাদ্যশস্য। যবের ছাতু বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজি দরে।

সদর উপজেলার ভেলাযান গ্রামের কৃষক শামসুল আলম শামসু বলেন, এক সময় কাউন, যব ও ঢেমসির আবাদ করতাম। এখন সামান্য কাউন ও যবের আবাদ করলেও ঢেমসির আবাদ আর করছি না। বাজারে চাহিদা না থাকায় ঢেমসি আবাদ করেন না বলে জানান তিনি।  

এদিকে নারগুণ ইউনিয়নের কহরপাড়া গ্রামের কৃষক সবুজ হোসেন বলেন, কৃষিতে এখন খরচ বেশি। একদিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্যদিকে শ্রমিকের মজুরি বেশি। তার ওপর কৃষি উপকরণের দাম দিন দিন বাড়ছে। তাই কৃষক লাভজনক ফসল চাষে ঝুঁকছে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, কৃষির আধুনিকীকরণ ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে লাভজনক শস্য উৎপাদন করছে কৃষকেরা। তবে কাউন, যব ও ঢেমসি চাষের গুরুত্বও রয়েছে। কারণ কাউন চাষে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। আদি ফসলগুলো খরাসহিঞ্চু, রোগবালাই ও কীটপতঙ্গমুক্ত। কাউন চালের ভাত, পায়েশ, পিঠা ও নাড়ু খেতে সু-স্বাদু। যবের ছাতু ও ঢেমসির চালের ভাত ও খই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এ জাতীয় ফসলের বৈচিত্র ধরে রাখতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান তিনি।