নদীর পাড়ে স্বামীর লাশ, কাঁদছেন স্ত্রী-সন্তান

‘রবিবার সকালে বাড়ি থাইকা বের হইছিল। সরাদিন কোনও খোঁজ পাই নাই। রাইতে মাইকিং করেছি। কিন্তু আইজ সকালে খবর পাইয়া আইসা দেখি মানুষটা মইরা পইরা আছে। মাইনষে মারছে গো, আমাগো অহন কী হইবো?’ 

স্বামীর লাশের অদূরে বসে এভাবে কাঁদছেন হালিমা। সঙ্গে তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে হাবিবুল্লাহ। এই দৃশ্য কুড়িগ্রাম শহরের ধরলা সেতুর পূর্বপ্রান্তের। সেখানে ঢোলকলমি ঝোপে পড়েছিল মুদি ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানের (৪০) রক্তাক্ত লাশ। সোমবার (২ মে) সকালে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।

জিয়াউর রহমানের বাড়ি ভূরুঙ্গামারী উপজেলার খামার আন্ধারীরঝাড় গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত বাহাদুর মন্ডলের ছেলে তিনি। আন্ধারীরঝাড় বাজারে মুদির দোকান রয়েছে তার। 

রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ ছিলেন। সোমবার সকালে নিজ এলাকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ধরলা নদীর পাড় থেকে লাশ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করে।

লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে জিয়াউরের স্ত্রী হালিমা ছেলেকে নিয়ে ছুটে আসেন ধরলার পাড়ে। স্বামীর এমন অবস্থা মানতে পারছেন না তিনি। ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। পাশে বসে কাঁদছিল তার ছেলে ও পরিবারের অন্য সদস্যরা।

হালিমা জানান, এক বছর থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন জিয়াউর। কবিরাজি চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ হয়েছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে কীসের যেন দুশ্চিন্তা করছিলেন। কিছুটা অস্থির ছিলেন। তবে কারও সঙ্গে কোনও শত্রুতা কিংবা ঋণগ্রস্ত ছিলেন না। কে, কেন এভাবে তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না হালিমা।

স্বামীর রক্তাক্ত লাশ দেখে চিৎকার করে হালিমা বলছেন, ‘মাইনষে মারছে গো, আমাগো অহন কী হইবো?’ পাশে বসে থাকা স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, ‘ধৈর্য ধর, আল্লাহ বিচার করবো।’

জিয়াউরের কপালে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। লাশ পড়ে থাকার স্থানে জমাটবাঁধা রক্ত ছিল। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, কেউ তাকে ধরলা পাড়ে এনে মাথায় আঘাত করে ফেলে গেছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহের পর সোমবার দুপুরে জিয়াউরের লাশ মর্গে পাঠায় পুলিশ।

সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘আলামত সংগ্রহ ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পাশাপাশি আমরা জিয়াউরের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’