চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নাগরিক সনদ না দিয়ে কৃষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ছেলেকে নিয়ে নাগরিক সনদ চাইতে আসা এক কৃষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। ইউপি নির্বাচনে বিপক্ষের প্রার্থীর হয়ে কাজ করায় ক্ষোভ থেকে চেয়ারম্যান এমন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ ওই কৃষকের।

রবিবার (৮ মে) বিকালে চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কৃষক রবিউল আলম (৫৮) ও তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (২০)। তবে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, রবিউল আলমের বাড়ি ভোগডাঙ্গা ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাণির খামার গ্রামে। তিনি গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের হয়ে কাজ করেছিলেন। আর চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। সাইদুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা শাখার সহসভাপতি।

রবিউলের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ জন্য তার ইউনিয়ন পরিষদ হতে নাগরিকত্ব সনদ প্রয়োজন। রবিবার বিকালে তিনি বাবাসহ ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের বাড়িতে যান। চেয়ারম্যান তার বাবাকে বাড়িতে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। আব্দুর রাজ্জাক নাগরিকত্ব সনদের প্রয়োজনীয়তার কথা জানালে চেয়ারম্যান উত্তেজিত হয়ে তার বাবাকে জুতা পেটা করতে চান।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বাড়িতে অনুষ্ঠান থাকায় সেখানে অনেক লোকজন ছিল। আমি বাবাসহ গিয়ে চেয়ারম্যানকে সালাম দিয়ে নাগরিকত্ব সনদের কথা বলি। তিনি তখন বলেন, তোমার ভাগ্য ভালো যে তোমার বাবা তুমিসহ আসছো, নাহলে জুতা মেরে বের করে দিতাম। চেয়ারম্যান আমার বাবাকে বলেন, নাগরিকত্ব সনদতো দূরের কথা, এই পাঁচ বছর তোর কোনও ছেলেকে সরকারি চাকরিও করতে দেবো না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনও সুবিধা তোদেরকে দেবো না। গোলাপ মাস্টারের (আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী) পক্ষে কাজ করছিস, তার কাছে গিয়ে কাগজ নে।’

কৃষক রবিউল আলম বলেন, ‘রবিবার বিকালে আমার ছেলের কাগজের জন্য চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাই। আমি মূর্খ মানুষ। কথা বার্তা ঠিকমতো বলতে পারি না। এ জন্য ছেলেকে কথা বলতে বলি। তখন চেয়ারম্যান বলেন, তোর ভাগ্য ভালো যে তোর ছেলে সাথে আছে। না হইলে তোক জুতাপিটা করলাম হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যানকে বললাম, আমি কী করছি, আপনাক কোনও গালি দিয়েছি? কাইয়ো কবার পাইবে? যদি এইটা প্রমাণ হয় তা হইলে আমাক জুতা দিয়া পিটান। আমাক তোমার রুমত নিয়া যায়য়া ডাঙ্গান (পিটান)।’

রবিউল বলেন ‘ছেলের সামনত আমাক এমন করি বলাতে আমার ছেলে কান্দি ফেলাইছে। আমি আর কোনও কথা কই নাই। আমার ছেলে আমার হাত ধরি টানি নিয়া আসছে।’

অভিযোগ অস্বীকার করে সাইদুর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। রবিবার আমার বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। কৃষক রবিউল বা তার ছেলে আমার বাড়িতে আসেনি। আজ ওই ছেলের ফুফা এসে কাগজ নিয়ে গেছে।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেদুল হাসান বলেন,‘রবিবার রাত থেকে কয়েকজনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের কথা শুনেছি। আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি ওই শিক্ষার্থীকে সনদ দিয়ে দিতে।’

সেবা গ্রহীতার সঙ্গে এমন আচরণের কারণে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘এজন্য ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ পেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’

এদিকে কৃষক রবিউলের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক সোমবার দুপুরে জানিয়েছেন, জিন্নাহ নামে স্থানীয় এক শিক্ষকের মাধ্যমে তিনি সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় নাগরিক সনদ হাতে পেয়েছেন।