কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, অর্ধলাখ পানিবন্দি

ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে উপজেলার ৪০ গ্রামের অন্তত অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও আবাদি জমি। জরুরি প্রয়োজনে নৌকায় করে যাতায়াত করছেন দুর্গতরা। পানিবন্দি দশার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও দুর্গতদের কাছে সরকারি সহায়তা পৌঁছেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, যাদুরচর, সদর, দাঁতভাঙা ও শৌলমারী ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে। বৃষ্টি চলমান থাকায় পানি নেমে যেতে আরও সময় লাগতে পারে। দুর্গতদের মধ্যে দ্রুত সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।

যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ্জামাল বলেন, তিন দিন ধরে বাড়ির চারপাশে পানি। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকায় বাজার ঘাটও করতে পারছি না। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এখনও কোনও সহায়তা পৌঁছেনি বলে জানান তিনি। 

সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে আমার ইউনিয়নের ২০-২২টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখনও কোনও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দ্রুত ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।’

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রৌমারীতে আকস্মিক বন্যার কারণে উপজেলার ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এবং এসব বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি থাকায় নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বারণ করা হয়েছে।

পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগম বলেন, ‘স্কুলের চারপাশে পানি। রাস্তাঘাট সবকিছু পানির নিচে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বারণ করা হয়েছে। গত শনিবার থেকে ক্লাস স্থগিত রাখা হয়েছে।’

ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলায় বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী সোমবার (১৩ জুন) পর্যন্ত উপজেলায় ২২৩ হেক্টর জমির পাট, ১৪৭ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ৭৩ হেক্টর জমির শাকসবজি এবং ৪৯ হেক্টর জমির তিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রৌমারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আজিজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাদুরচর ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম কমবেশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এবং বাড়িঘরের চারপাশ প্লাবিত হওয়ায় উপজেলায় আনুমানিক প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভারী বৃষ্টিতে উপজেলার রৌমারী-ঢাকা সড়ক (ডিসি রোড) এবং তুরা রোডের অনেক স্থানের মাটি সরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। গত কয়েক দিনে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। দুর্গতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।’ আগামীকাল থেকে এসব খাবার বিতরণ শুরু হবে বলে জানান তিনি।