দুই বছরে কুড়িগ্রামে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ

অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে গত দুই বছরে ১৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নান আট পৃথক মামলায় এ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ছয় জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অন্যতম। 

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালে যোগদানের পর গত দুই বছরে আট মামলায় ১৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার পাশাপাশি ছয় মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো.আব্দুল মান্নান। এছাড়া একটি মামলায় একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং পৃথক পাঁচটি মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন।

আদালত সূত্র আরও জানায়, রায় দেওয়া মামলাগুলোর মধ্যে আলোচিত ছিল ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের একই পরিবারের চার জনকে হত্যার অভিযোগে ছয় আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ। পাশাপাশি কুড়িগ্রাম শহরের পৌর এলাকার গড়ের পাড় এলাকার ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যাকাণ্ডে ছয় জেএমবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ। রায় দুটি যথাক্রমে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন আদালত।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ অপরাধ কমিয়ে আনতে সহায়ক হয়। অপরাধীরা শেষ পরিণতি বিবেচনায় অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারলে তা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি ভূমিকা পালন করে।

ফৌজদারি অপরাধ নিয়ে কাজ করা কুড়িগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এটিএম এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ মনে করেন, ন্যায় ও যথাযথ দণ্ড হলে তা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

‌‘দণ্ডাদেশ নিয়ে সাধারণ মানুষের বা সামাজিক পারসেপশন কী, আদেশটি বাদী ও আসামি উভয় পক্ষকে এবং নাগরিককে সন্তুষ্ট করতে পারছে কিনা তার ওপর অপরাধ প্রবণতা কমা নির্ভর করবে।’ বলেন এই আইনজীবী।

রায় ঘোষণার পরপরই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগা‌রে পাঠা‌নো হয়

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘সাজাগুলো সমাজে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কাজেই অপরাধীর সাজা হলে তা সমাজে অপরাধ দমনে কাজে দেবে।’

আরও পড়ুন: মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌কে হত্যার দা‌য়ে ৬ জেএম‌বি সদ‌স্যের মৃত্যুদণ্ড

সাজার অনেকগুলো উদ্দেশ্য থাকে জানিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই আইনজীবী বলেন, ‘সাজার উদ্দেশ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যা দেখে অন্য ব্যক্তি অপরাধ করার আগে ১০ বার ভাববে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা গেলে অবশ্যই অপরাধ কমবে। এছাড়া অপরাধী সাজা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ন্যায়বিচার পাওয়ার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি অনুভব করেন।’

মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যাকাণ্ডে ছয় জেএমবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘ধর্মের নামে যারা তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে, রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে চায়, এই রায় তাদের জন্য বার্তা।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘অপরাধীরা সাজা পেলে তা অবশ্যই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। তবে মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নিতে হবে।’ মামলা দীর্ঘসূত্রতায় মানুষ বিচার বিমুখ হয়ে যায় বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
অপরাধী সাজা পাওয়ার পর তা প্রচার পাওয়া উচিত বলে মনে করেন ইশরাত। 

তিনি বলেন, ‘দৃষ্টান্তমূলক সাজার আদেশগুলো প্রচার করতে হবে, যেন সাধারণ মানুষের কাছে বার্তাটি পৌঁছায়। এতে তাদের (অপরাধীদের) পরিবার কী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা জানা গেলে অন্য ব্যক্তি অপরাধ করার আগে তার পরিবারের কথা ভেবে হলেও নিবৃত্ত হবে।’