গরিবের ৮০ বস্তা চাল ব্যবসায়ীর বাড়িতে

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ঈদ উপলক্ষে গরিবদের মাঝে বরাদ্দের ৮০ বস্তা চাল এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদসহ এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি।

শুক্রবার (৮ জুলাই) বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের বরকাতপুর গ্রাম থেকে চালগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ পেশায় চাল ব্যবসায়ী। তিনি বরকাতপুর গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বিকাল থেকে বরকাতপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সামাদের বাড়িতে চালের বস্তাগুলো মজুত করা হয়। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় হরিনাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। পুলিশ এসে প্রথমে ৫ বস্তা উদ্ধার করে। এরপর আরও ৭৫ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়।

অভিযানের সময় বাড়ির মালিক সামাদ পালিয়ে যান। এ সময় ভ্যানচালকরা চালগুলো ফেলে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশকে তারা জানান, চালের বস্তাগুলো ব্যবসায়ী সামাদের। ৩০ কেজি ওজনের চালের বস্তাগুলোর মধ্যে সরকারি সিলযুক্ত বস্তাও পাওয়া যায়। সামাদ চালগুলো কিনে বাড়িতে মজুত করেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান নয়ন। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে তিনি চালের বস্তাগুলো জব্দ করে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পাঠান।

ইউএনও বলেন, ঈদ উপলক্ষে দরিদ্র মানুষের মাঝে এসব চাল বিতরণের কথা। কিন্তু তা না করে চালগুলো কালোবাজারে বিক্রির পর বাড়িতে মজুত করা হয়। এসব চাল মজুতের দাড় এড়াতে পারেন না ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রাথমিকভাবে চাল মজুতের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী সামাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। পুরো ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তবে চাল বিক্রি কিংবা মজুতের বিষয়ে জানা নেই বলে দাবি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহাবুবার রহমানের। তিনি বলেন, ইউনিয়নে তিন হাজারের বেশি সুবিধাভোগীর মাঝে দিনভর চাল বিতরণ করা হয়। বিতরণের পর অনেকে চাল ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দরিদ্ররা ছাড়াও সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম দিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। এসব লোকজন চাল বিক্রি করে দেন।

এর আগে সকাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে সুবিধাভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু প্রত্যেককে ১০ কেজি চালের জায়গায় ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুবিধাভোগী ও স্থানীয়রা। এছাড়া তালিকায় নাম ও স্লিপ থাকার পরও কেউ কেউ চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ রানা বলেন, চাল উদ্ধারের ঘটনায় ইউপি সচিব বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে নামীয় ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। রাতেই অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।