নিজের পদই ‘অবৈধ’, অন্যকে শোকজ

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক অবসর নেওয়ার পর সরকারি বিধি ভঙ্গ করে স্কুলের সহকারী শিক্ষক আহম্মদ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্কুল গভর্নিং বডির এমন সিদ্ধান্তকে সরকারি আইন পরিপন্থী এবং সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়াকে অবৈধ বলেছে জেলা শিক্ষা বিভাগ। 

তবে নিজের দায়ত্বভার গ্রহণ অবৈধ হলেও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে উল্টো সহকারী প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন সহকারী শিক্ষক আহম্মদ হোসেন। কারণ দর্শানোর নোটিশের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

সহকারী প্রধান শিক্ষককে পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আহম্মদ হোসেন। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আলী আকবর ১ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া তিনি (সহকারী প্রধান শিক্ষক) স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসাধন অব্যাহত রেখেছেন। এ অবস্থায় কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা পত্র জারির সাত দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। নোটিশে গভর্নিং বডির সভাপতি ও শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম প্রতি স্বাক্ষর করেছেন।

কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক আলী আকবর বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। তবে ওই নোটিশ আমি গ্রহণ করিনি। তার নিজের পদই বৈধ নয়। তিনি কীভাবে আমাকে নোটিশ দেন?’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় দায়িত্ব না দিয়ে কমিটি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি তা পালন করতে বাধ্য। বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার স্বার্থে আমি সহকারী প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।’

নিজের দায়িত্বভার গ্রহণ বৈধ না হলেও অন্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘কমিটি যেহেতু আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেজন্য আমি এটা করেছি।’

তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেছেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকার পরও অন্য কোনও শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হলে সরকারি বিধি মোতাবেক তা অবৈধ। এটি বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যকলাপ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করায় সরকারি নির্দেশনার লঙ্ঘন হয়েছে। ফলে ওই সহকারী শিক্ষকের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করাটাই অবৈধ।’

নিজের পদের বৈধতা না থাকলে ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহকারী প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘কখনই পারেন না। তিনি নিজে বৈধ না হলে অন্যকে কীভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবেন। এটা বিধিবহির্ভূত কাজ। সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অবজ্ঞা করে তাকে (আহম্মদ হোসেন) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি কাউকে এভাবে নোটিশ করতে পারেন না।’

‘সহকারী প্রধান শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতিকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে ওই কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর সুপারিশ পাঠানো হবে।’ যোগ করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।