বিধি লঙ্ঘন করে সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার বজরা তবকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক কর্মরত থাকার পরও সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এক সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমিন বেগম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সদ্যবিদায়ী প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূতভাবে সহকারী শিক্ষকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বজরা তবকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন সরকার চলতি বছরের ১৩ জুলাই অবসর গ্রহণ করেন। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে কিংবা প্রধান শিক্ষক কোনও কারণে অনুপস্থিত থাকলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকার পরও ম্যানেজিং কমিটি সরকারি পরিপত্রের তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস ছালামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সহকারী শিক্ষকের স্বাক্ষরে গত জুলাই মাসের বিল ব্যাংকে প্রেরণ করা হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা ফেরত দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব পালন সম্পর্কিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি পরিপত্রে (স্মারক নং: শিম/শা:১১/৩-৯/২০১১/২৫৬) বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় অপর কোনও শিক্ষককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পণ করা যাবে না।

এতে আরও বলা হয়েছে, কোনও বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন।

অভিযোগকারী সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমিন বেগম বলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি কর্মরত থাকার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। আমি এর প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে অভিযোগ দিয়েছি।’

সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব না দিয়ে সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া সরকারি পরিপত্রের পরিপন্থি বলে স্বীকার করেছেন সদ্যবিদায়ী প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন সরকার। তবে এর দায় তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ওপর চাপিয়েছেন।

বিদায়ী এই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘কমিটি যেভাবে রেজুলেশন করেছে আমি সে অনুযায়ী দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। এর দায় কমিটির।’ সহকারী প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন বলেও দাবি করেন সাবেক এই প্রধান শিক্ষক।

তবে তার এ দাবি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমিন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি অপারগতা প্রকাশ করিনি। অপারগতা প্রকাশ করলে অভিযোগ দিতাম না।’

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন এলাকায় থাকেন না। তিনি রংপুরের বাসিন্দা। বিদায়ী প্রধান শিক্ষক কৌশলে তাকে দিয়ে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘রেজুলশন অনুযায়ী আমি সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছি। পরিপত্রে কী আছে সেটা আমার জানা নেই। বিষয়টি দেখে প্রয়োজনে আবার মিটিং ডেকে সমাধানের ব্যবস্থা নেবো।’

রেজুলেশন কে করেছেন, এমন প্রশ্নে ম্যানেজিং কমিটির এই সভাপতি বলেন, ‘রেজুলেশন সাধারণত প্রধান শিক্ষক করেন। সভাপতি শুধু স্বাক্ষর করেন।’

অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে চিলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তাহের আলী বলেন, ‘এভাবে দায়িত্ব অর্পণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) শামসুল আলম বলেন, ‘ওই স্কুলের বিষয়ে আমি এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’