৩ কিলোমিটার জুড়ে তিস্তার ভাঙন, বাস্তুহারা শতাধিক পরিবার  

ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে কুড়িগ্রামের তিস্তা পাড়ের মানুষ। গত পাঁচ‌দি‌নে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙনের তোড়ে জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিন গ্রামের শতা‌ধিক প‌রিবার বাস্তুহারা হ‌য়ে‌ছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাকা সড়ক। ভাঙন কবলিতরা কেউ খোলা আকা‌শের নি‌চে আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অ‌ন্যের বাড়ি‌তে। বিপর্যস্ত এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিতদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে অ‌ভি‌যোগ ভুক্তভোগীদের

ত‌বে উপ‌জেলা প্রশাসন বল‌ছে, তারা স্থানীয় জনপ্রতি‌নি‌ধি‌দের মাধ্যমে ক্ষ‌তিগ্রস্ত প‌রিবা‌রের তা‌লিকা প্রস্তু‌তের কাজ কর‌ছেন। দুর্গত‌দের সব ধর‌ণের সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

ভাঙ‌নে বিপর্যস্ত তিস্তা পা‌রের বা‌সিন্দারা জানান, উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রামে গত এক মাস ধ‌রে তিস্তার ভাঙন চল‌ছে। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ি থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরমধ্যে গত তিনদিনে হঠাৎ করে ভাঙনের তীব্রতায় শতাধিক বাড়িঘর, পাঁচশ’ বিঘা ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, মসজিদ, মন্দিরসহ ঈদগাহ মাঠ তিস্তার ভাঙ‌নে বি‌লীন হ‌য়ে‌ছে। ভাঙনের কারণে একরাতেই কমিউনিটি ক্লিনিক ও ২০/২৫টি প‌রিবারের ভিটাবা‌ড়ি নদী গর্ভে চ‌লে গেছে। প্রাণ বাঁচা‌তে অ‌নেকে ঘ‌রের জি‌নিসপত্র সরানোর সময়টুকুও পান‌নি। 

বজরা পশ্চিম পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মৌলভী রেফাকাত হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছি। গত পরশুদিন থেকে ভাঙনে মাদ্রাসার অর্ধেক চলে গেছে। তিলে তিলে গড়া প্রতিষ্ঠানটি চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, বলে আক্ষেপ করেন তিনি। 

তিস্তার ভাঙ‌নের শিকার কালপানি বজরা গ্রা‌মের মোজাম্মেল হক (৬৫) ব‌লেন, ‌‘তিনদিন থাকি খোলা জাগাত পরি আছি। হামরা গরিব মানুষ, কোনও‌টেই যাওয়ার জায়গা নাই।’ আশ্রয়ের জন্য নিকটাত্মীয়‌দের সঙ্গে যোগা‌যোগ কর‌ছেন ব‌লে জানান তিনি। 

স্থানীয়‌দের অ‌ভি‌যোগ, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শুধু দেখে গেছেন। ভাঙনরো‌ধে তাদের নাকি কিছুই করার নেই। দুর্দশাগ্রস্তদের অ‌নে‌কে বৃষ্টির মধ্যেই মানবেতর জীবন যাপন কর‌ছেন।

ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দফতরে ভাঙনের বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

ত‌বে উ‌লিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিপুল কুমার বলেন, আমরা খোঁজ নি‌য়েছি। স্থানীয় জনপ্রতি‌নি‌ধি‌দের মাধ্যমে ক্ষ‌তিগ্রস্থদের তা‌লিকা প্রস্তু‌তের কাজ চল‌ছে।

‌তি‌নি আরও বলেন, ‘বুধবার বিকা‌লে আমরা ঘটনাস্থল প‌রিদর্শন করেছি। ভুক্ত‌ভোগী‌দের তা‌লিকা ক‌রে প্রয়োজনীয় সব ধর‌নের সহায়তা করা হ‌বে। যারা খোলা আকা‌শের নি‌চে আ‌ছেন তা‌দের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ব‌লেন, তিস্তায় তীব্র ভাঙন শুরু হ‌য়ে‌ছে। বজরায় প্রায় তিন কি‌লো‌মিটার এলাকা জু‌ড়ে ভাঙন চল‌ছে। ভাঙন প্রতি‌রো‌ধে আমরা প্রায় ৫০০ মিটার এলাকাজু‌ড়ে বালু ভ‌র্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ কর‌ছি।