ক্যানেলের পানিতে আমনের বাম্পার ফলনের আশা

এ বছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তেমন বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এদিকে ভাদ্রও চলে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক এলাকায় ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে ওইসব এলাকায় আমন ধানের চারা রোপণ করে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। তবে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত কৃষকরা জানিয়েছেন আনন্দের কথা। তারা অল্প খরচে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ফসলের বাম্পার ফলনেরও আশা করছেন প্রকল্পভুক্ত কৃষকরা।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ সম্প্রসারণ দফতর বলছে, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১২ উপজেলার প্রায় ৬ লাখ কৃষক তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত রয়েছেন। এবার আমন আবাদে ৪০ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় করেছে তিস্তা সেচ প্রকল্প। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায়, শ্যালো মেশিন দিয়ে এক বিঘা জমি সেচ দিতে খরচ হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর সেচ ক্যানেলের পানিতে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৮০ টাকা। তিস্তার পানিতে এক বছরে একরে খরচ হয় ৪৮০ টাকা।

তবে কৃষকরা বলছেন, জ্বালানি তেল, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলে লোকসান গুনতে হবে।

আমনে ৪০ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় করেছে তিস্তা সেচ প্রকল্প

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের ক্যানেল সংলগ্ন নাদিরার মোড়ের কৃষক সুবাস রায় বলেন, ‘ছয় বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছি। ক্যানেলে পানি না থাকলে ধান লাগাতেই পারতাম না। দুই মাস হলো এলাকায় বৃষ্টি নেই। যেসব কৃষক ক্যানেলভুক্ত নন, খরায় তাদের জমির মাটি ফেটে চৌচির।’

একই এলাকার আইজুল ইসলাম বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। পানির অভাব নেই। এক বিঘায় ৮০ টাকা দিতে হয়। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকের জমি ফেটে চৌচির। পানির অভাবে অনেকের ধান পুড়ে গেছে। পানি পাওয়ায় আমার ধান ভালো হয়েছে।’

এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ধানের চারা রোপণ থেকে শুরু করে ছয় থেকে সাত বার পানি দিলেই যথেষ্ট। ক্যানেলে পানিও আছে প্রচুর। আমন আবাদে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। এলাকার কৃষকরা আমনের ভালো ফলনের আশা করছেন।’

৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, খরার কারণে চলতি আমন মৌসুমে ৪০ কোটি টাকার ডিজেল সাশ্রয় করেছে তিস্তা সেচ প্রকল্প। ক্যানেলে পর্যপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়ায় শ্যালো মেশিন, বিদ্যুৎ চালিত পাম্প ব্যবহার করতে হয়নি। চলতি মৌসুমে ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ক্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ দৌলা বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও সেচ বাবদ কৃষকদের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি ৮০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এবার আগস্ট পর্যন্ত ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে। ধানের চারা তরতাজা ও সবল হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৮৫ সালের পর ক্যানেলগুলো সংস্কার করা হয়নি। সেচ ক্যানেলগুলো সংস্কার করা হলে ওই পরিমাণ জমিতে (৬০ হাজার হেক্টর) সেচ দেওয়া যাবে। এতে জ্বালানি খরচ থেকে সাশ্রয় হবে সরকারের কোটি টাকা।’