‘কত লোক আসে লেখে আর মাপে, সেতু হয় না’

দীর্ঘদিনের দাবি পরও নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের কোরানীপাড়া ঘাট গ্রামের যমুনেশ্বরী নদীর ওপর হয়নি একটি সেতু। এতে ভোগান্তিতে রয়েছেন পঞ্চপুকুর ও বাবড়ীঝাড় ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ। এলাকাবাসী ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো বেয়ে চলাচল করছেন। স্থানীয়রা অবিলম্বে সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনেশ্বরী নদীর ওপর যৌথ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন এলাকাবাসী। এর পূর্ব দিকে রয়েছে উত্তরা শশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমে উত্তর কানিয়াল খাতা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কানিয়ালখাতা দাখিল মাদ্রাসা, কানিয়ালখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এলাকার একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র ওসমানিয়া উদ্যান। রোগী পরিবহন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ওই সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করছেন। জেলা শহরে যেতেও ১০ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা সাঁকোটি।

স্থানীয়রা জানান, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নদীর পানির স্রোতে সাঁকো ভেঙে যায়। তখন কলা গাছের ভেলা বানিয়ে পার হতে হয়। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুচিন্তায় থাকতে হয় অভিভাবকদের। একটি সেতু হলে এলাকার দৃশ্যপট বদলে যাবে। লেখাপড়ায় এগিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।

উত্তর কানিয়াল খাতা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করি। বর্ষায় পানির স্রোতে সাঁকো ভেঙে গেলে দেড় থেকে দুই মাস বাড়িতে বসে থাকতে হয়। এতে পরীক্ষার ফলসহ লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়তে হয়। তখন বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলা গাছের ভেলায় নদী পারাপার হই। অনেক সময় বই-খাতা নদীতে পড়ে ভেসে যায়। আমাদের বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।’

উপজেলার কানিয়ালখাতা গ্রামের বাসিন্দা লাল বাবু, কৃপা নাথ রায় বলেন, ‘কত লোক আসে, লেখে আর মাপে, কিন্তু আজ পর্যন্ত সেতুর মুখ দেখা হলো না। মৃত্যুর আগে যেন সেতু দেখি।’

একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ওহাব বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে হাট-বাজারে যাই। ছেলে-মেয়ে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ার জন্য জেলা শহরে যায়। প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে আমাদের শহরে যেতে হয়। একটি সেতু হলে সব দুঃখ দূর হবে। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। ভোট এলে সবাই সেতু নির্মাণ করে দিতে চায়। ভোটে জিতলে আর কেউ খবর রাখে না। বছরের পর বছর আশায় আশায় দিন যায়, কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

উপজেলার বাবড়ীঝাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা বলেন, ‘যমুনেশ্বরী নদীতে একটি সেতু খুব দরকার। আমার ইউনিয়নেরও পাঁচ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা ওই বাঁশের সাঁকো। উপজেলার মাসিক মিটিংয়ে পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আমি ব্রিজের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আশা করি, দ্রুত স্থায়ী সমাধান হবে।’

এই বিষয়ে নীলফামারী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সুজন কুমার কর বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’