চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: এত প্রশ্ন ফাঁস হলো কীভাবে?
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষা-২০২২ এ দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অধীন ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর (২) (খ) (আ) অনুসারে অসদাচরণের দায়ে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, ‘আদেশের কপি পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী পরীক্ষায় তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।’
আরও পড়ুন: প্রশ্ন মিলেছে ছয় বিষয়ের, পরীক্ষা স্থগিত চারটি
এদিকে, পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের জন্য উপজেলা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটি দায় এড়াতে পারে কিনা তা নিয়ে শিক্ষক অভিভাবক মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। যে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁস ও উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে, সে কেন্দ্রের ট্যাগ কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলা ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছিল।
সচেতন মহলে এমন প্রশ্নের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলার শিক্ষা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অবশ্যই কেন্দ্রের ট্যাগ কর্মকর্তা কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না। এখানে তারও দায়িত্ব রয়েছে। কারণ প্রশ্নের প্যাকেট তার উপস্থিতিতে খোলার কথা। সেই প্যাকেটের ভেতর কী ছিল তা দেখার দায়িত্ব তার। কাজেই তিনি কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না।’
উপজেলা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সমালোচনা করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ছয়টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এত কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র সর্টিংয়ের দায়িত্ব শুধু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ওপর দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে এতে সংযুক্ত করা উচিত ছিল। এজন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াতে পারে না।’
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলমান এসএসসি পরীক্ষার গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষি ও রসায়ন—এই চারটি বিষয়ের পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নোটিশের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মূলত ভূরুঙ্গামারী উপজেলার একটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে এসএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা বোর্ড। এরই মধ্যে প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমানসহ পাঁচ শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের পিয়নকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে মামলার এজাহারে ছয় বিষয়ের প্রশ্নপত্র উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে চারটির পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।