পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির জন্য আউলিয়া ঘাটের ইজারাদারকে দুষছেন বদেশ্বরী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিতিশ কুমার বকসী।
তিনি বলছেন, পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য ছয়টি নৌকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘাটে এসেছিল মাত্র একটি। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও বাকি নৌকাগুলো না আসায় একটিতেই উঠে পার হওয়ার চেষ্টা করেন পুণ্যার্থীরা। ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ওঠায় মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। ইজারাদারের গাফিলতিতেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাড়তি নৌকা দিলে এমনটা ঘটতো না।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় নৌকাডুবি, ষষ্ঠ দিনের উদ্ধার অভিযান চলছে
নিতিশ কুমার বকশী একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি বদেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত অনাথ আশ্রম পরিচালনা করছেন। ওই আশ্রমেই বসবাস করেন তিনি।
নৌকাডুবির ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নিতিশ কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মহালয়ার অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য মহালয়া পরিচালনা কমিটি স্থানীয় প্রশাসনসহ আউলিয়া ঘাট ইজারাদারের অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে অন্তত ছয়টি নৌকা দেওয়ার অনুরোধ করে। অনুষ্ঠানের আগের দিনও ঘাট পরিদর্শন করে ছয়টি নৌকা রাখার অনুরোধ করা হয়। ইজারাদারের অংশীজনরা তাতে সম্মতি প্রদান এবং যথাসময়ে ঘাটে নৌকা থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু পরদিন ঘাটে দুটি নৌকা দেওয়া হয়। মহালয়ার দিন সকালে ভক্তদের উপস্থিতি কম হওয়ায় কমিটির সহ-সভাপতি শক্তিপদ রায় ঘাটে গিয়ে নৌকার কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা (ইজারাদারের লোকজন) জানায়, পাঁচটি নৌকা আসতেছে। এরও কিছু পরে মন্দিরের পুরোহিতের ছেলে তুলসিকে ঘাটে পাঠিয়ে নৌকার খোঁজ নেওয়া হয়। তখনও তারা (ইজারাদারের লোকজন) জানায়, নৌকা কাছাকাছি চলে আসছে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও ঘাটে বাড়তি কোনও নৌকা আসেনি। ভক্তরা দীর্ঘক্ষণ ঘাটে অপেক্ষা করেও পার হতে না পারায় অস্থির হয়ে উঠেছিল। ফলে এক নৌকাতেই অনেক ভক্ত উঠে নদী পার হওয়ার চেষ্টা করে। এতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।’
আরও পড়ুন: একসঙ্গে এত লাশ কখনও দেখেনি মাড়েয়া গ্রামের মানুষ
একই সঙ্গে ঘাটে উপস্থিত পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও গ্রাম পুলিশের সদস্যদের আরও কঠোর হয়ে অতিরিক্ত যাত্রী উঠতে বাধা না দেওয়ারও সমালোচনা করেন নিতিশ কুমার।
স্বজন হারানো ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর খোঁজ-খবর নিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিটি পরিবারে যাচ্ছি। যারা বেঁচে ফিরেছেন তাদের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনে বলছি। ইজারাদারের লোকরা কথামতো নৌকা সরবরাহ করলে এত বড় দুর্ঘটনা হতো না।’
নিহতদের মধ্যে ৮০ শতাংশই দরিদ্র পরিবারের জানিয়ে নিতিশ কুমার বক্সী বলেন, ‘এই পরিবারগুলোর অনেকেই তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছেন। সাময়িক অর্থ সহায়তা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। এদের উপার্জনের ব্যবস্থা না করলে পরিবারগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
ঘটনার পর থেকে আউলিয়া ঘাটের ইজারাদার আব্দুল জব্বার পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তার সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: করতোয়ার পাড় থেকে শ্মশান ঘাট, লাশ আর লাশ
প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে হিন্দু পুণ্যার্থীদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। মহালয়ার পূজা ও স্নান উৎসবে অংশ নিতে করতোয়া পাড়ি দিয়ে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু একটি নৌকায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় মাঝ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে গত বুধবার পর্যন্ত ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ তিন জন। নিখোঁজদের খোঁজে আজ সকাল থেকে ষষ্ঠ দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চলছে।