২৭০ বছরের ঐতিহ্য: কান্তজিউ মন্দিরে রাস উৎসব শুরু

দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে ২৭০ বছরের পুরনো রাস উৎসব ও মাসব্যাপী রাস মেলা শুরু হয়েছে। সোমবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাস উৎসব ও মেলার উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র সহ-সভাপতি এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল উপস্থিত ছিলেন। 

এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংগ্রাম করে করে যাচ্ছেন। যতদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, ততদিন এ দেশের সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। ইতোপূর্বে ধর্মীয় উসকানি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলে এ দেশে কেউ আর কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করতে পারবে না।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, দিনাজপুর জেলা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন। কোনও কুচক্রি মহল এই সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে পারবে না। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। আর ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরে আজকের রাস মেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করছে। 

তিনি আরও বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার জন্য আইন শিগগিরই সংসদে উপস্থাপন হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কান্তনগরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে উন্নয়ন করবে আর দেবোত্তর আয়ের টাকায় মন্দিরের সংস্কার  হবে না, এটা হতে পারে না। দেবোত্তরের টাকায় অন্য জায়গায় উন্নয়ন হয়, কিন্তু মন্দিরের উন্নয়ন হয় না। এভাবেই চলতে থাকলে দেবোত্তর এস্টেট কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন এমপি গোপাল।

কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দিনাজপুুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) দেবাশিষ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রেজওয়ানুল হক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর রাস পূর্ণিমার তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। ১৯৫২ সাল থেকে এই উৎসব চলে আসছে। রাজ পরিবারের রাজা প্রাণনাথ ১৭০৪ সালে কান্তজিউ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরে তার পোষ্যপুত্র রামনাথ ১৭৫২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এরপর থেকেই ওই স্থানে রাস উৎসব ও মেলা হয়ে আসছে। রাস উৎসব উপলক্ষে মন্দিরের সামনে রাস মেলা বসে। এই উৎসব ও মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও শতশত নারী-পুরুষ ভক্ত-পূণ্যার্থী ও পর্যটকেরা আসেন। নির্মল বিনোদনের জন্য সার্কাসসহ ধর্মীয় কীর্ত্তণগান ছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় বই-পুস্তক, শাঁখা-সিঁদুর, শঙ্খ, বালা, চুড়িসহ নানান পণ্যের পসরা সমৃদ্ধ দোকান বসে।