৩৭ বছরে এসএসসি পাস করেছেন গোলাপী

দরিদ্রতার কারণে এসএসসি পাসের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল গোলাপী বেগমকে। এরপর আর পড়ার টেবিলে বসার ফুরসত মেলেনি। সংসারের ঘানি টানতে শেষে কর্মজীবী নারীর তালিকায় নাম লেখান তিনি। ৩৭ বছর বয়সী এই নারী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে মাস্টার রোলে কাজ করলেও তার লেখাপড়া করার ইচ্ছা দমেনি। গোলাপীর মনোবাসনা বুঝতে পেরে কলেজ অধ্যক্ষ তাকে এসএসসি পরীক্ষা দিতে অনুপ্রাণিত করেন। এ বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে তিনি দাখিল (ভোক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। পেয়েছে জিপিএ-৪.৯৩।

তার বাড়ি কুড়িগ্রাম শহরের তালতলা গ্রামে। স্বামী লুৎফর রহমান কুড়িগ্রাম পৌরসভার মাস্টাররোল কর্মচারী। গোলাপী বেগম বর্তমানে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের গার্লস হোস্টেলে মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছেন। পরীক্ষার ফল শিট ও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ৩ মার্চ ১৯৮৫ সাল। এর আগে পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়ে যায়।

গোলাপী জানান, সংসারের অভাবের কারণে ২০১৬ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে কাজ শুরু করেন। কাজ শুরুর পর কলেজের অন্যান্য কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দেখে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করেন। তখন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিনের অনুপ্রেণায় তিনি আবার পড়ালেখা শুরু করেন। এরপর ২০২০ সালে তিনি কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ভোকেশনাল কোর্সে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি দাখিল পাস করেন।

গোলাপী বেগম বলেন, ‘এই বয়সে এসেও যে আমি পাস করতে পারবো ভাবতে পারিনি। ফলাফলের দিন সকাল থেকে ছটফট করতেছিল। আমি কলেজে ছিলাম, কলেজের ইংরেজি বিভাগে গিয়ে কম্পিউটারে রেজাল্ট জানতে পারি যে আমি পাস করেছি। আমার খুব ভালো লাগছে।’

ভবিষ্যতে আরও পড়তে চান কি না- জবাবে বলেন, ‘সুযোগ পেলে পড়তে চাই। পাসের খবরে আমার স্বামী ও সন্তান খুব খুশি। আমার ছেলে ঢাকা থেকে আমার জন্য একটা জ্যাকেট কিনে কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়েছে।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গোলাপী বেগম এই কলেজের একজন কর্মচারী। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়ে যায় শুনেছি। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি আগ্রহের কথা জানতে পেরে আমি তাকে আবার পড়ালেখার পরামর্শ দেই। গতকাল তার পাসের খবর শুনে কলেজের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা দিয়েছি। সে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে কলেজ তার পাশে থাকবে।’

কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. নূর বখ্ত বলেন, ‘৪০ বছর বয়স পর্যন্ত যেকোনও শিক্ষার্থী ভোকেশনাল কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এ বছর আমাদের মাদ্রাসার ভোকেশনাল কোর্সের দুই ট্রেড থেকে ৪৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩৩ জন পাস করেছে। গোলাপী বেগম তাদের একজন। সে আগামী দিনে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে সফল হোক, আমরা সেই দোয়া করি।’

এ ছাড়াও এই মাদ্রাসা থেকে এ বছর দাখিল পরীক্ষায় ৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১ জন, যা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন জেলায় সর্বোচ্চ বলে জানান অধ্যক্ষ।