৫ বছর মাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরছে কিশোর ছেলে, এগিয়ে এলেন পুলিশ কর্মকর্তা

প্যারালাইসিসে পঙ্গু হওয়া মা আজিদাকে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ঘাড়ে নিয়ে রংপুর নগরীতে আসছে কিশোর ছেলে মোস্তাকিন। মাকে ঘাড়ে নিয়েই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করতো এই কিশোর। সারাদিন ভিক্ষা করে যা পায় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে ১৪ বছর বয়সী কিশোরের এই সংগ্রাম চলছে পাঁচ বছর ধরে। তবে মা-ছেলের এই করুণ দশা দেখে পাশে দাঁড়ালেন রংপুর সদর কোর্টের সহকারী টাউন সাব ইন্সপেক্টর (এটিসিএসআই) শেখ মোস্তাফিজার রহমান।

নিজের বেতনের টাকা দিয়ে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) এই পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাকিনের মায়ের জন্য একটি হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছেন। নিজেই ওই নারীকে চেয়ারটিতে বসিয়ে দিলেন। রংপুর প্রেসক্লাব বিপণী বিতানে এই উপহার দেওয়ার সময় রংপুরের প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সাহেদসহ গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মায়ের জন্য চেয়ার পেয়ে হাসি ফোটে মোস্তাকিনের মুখে।

মোস্তাকিন জানায়, তার বয়স যখন ছয় মাস তখন তার বাবা মোস্তফা মারা যান। বাবার চেহারাটা তার মনে নেই, স্মরণও করতে পারে না। তারা দুই ভাই-বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সে অন্যত্র থাকে। সহায় সম্বলহীন মা আদিজাসহ রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গোপালপুর গুচ্ছ গ্রামে থাকে। ছোট্ট একটি টিনের ঘরে মা-ছেলে থাকে। ৬ বছর আগে তার মা আজিদা স্ট্রোক করলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কিছু দিনের মধ্যে পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে যায়। হাঁটাচলা একেবারেই করতে পারেন না। এরপর আট বছর বয়সী মোস্তাকিন অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটাতে থাকে। মায়ের চিকিৎসার জন্য ওষুধ কেনা নিজেদের খাওয়া এসব চিন্তা করে মাকে ঘাড়ে করে এই বয়সেই ভিক্ষা শুরু করে।

rangpur2

সে আরও জানায়, প্রথমদিকে গ্রামে ভিক্ষা করতো। গত পাঁচ বছর ধরে রিকশাভ্যানে করে প্রতিদিন সকালে রংপুরে আসে। দিনভর মাকে ঘাড়ে করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দিনভর ভিক্ষা করে। দিনে ৩০০/৪০০ টাকা আবারও কখনও বেশি আয় হয়। তা দিয়ে মা-ছেলের দুবেলা আহার জোটে।

এটিসিএসআই শেখ মোস্তাফিজার রহমান জানান, তিনি প্রায় লক্ষ্য করেন তার ছেলে বয়সী এক কিশোর প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে পুরোপুরি পঙ্গু বৃদ্ধ মাকে তার ঘাড়ে তুলে আদালত পাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের কাছে ভিক্ষা চায়। দীর্ঘ সময় ধরে ঘাড়ে বেড়াতে তার প্রচণ্ড কষ্ট হলেও মায়ের ভারকে তুচ্ছ মনে করে দিনভর এভাবে ভিক্ষা করে ছেলেটি। এ দৃশ্য অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করে আসছিলেন।

তিনি জানান, মোস্তাকিনের মতো তার নিজের একটি সন্তান আছে। ওই বয়সে বৃদ্ধা মাকে ঘাড়ে করে দিনভর ঘুরে ভিক্ষা করার বিরল দৃশ্য তাকে প্রচণ্ড ব্যথা দেয়। এতে নিজের বেতনের টাকা থেকে সাত হাজার টাকা দিয়ে হুইল চেয়ার কিনে দেন।