প্লেটের খাবার ফেলে রেখে গেলেন স্বামী, হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রী পেলেন লাশ

‘স্বামীসহ ভাত খাচ্ছিলাম। হঠাৎ তার কাছে একটি ফোন আসে। ভাতের প্লেট রেখে তিনি চলে যান। পরে খবর শুনে হাসপাতালে এসে দেখি আমার স্বামী নাই!’ ডুকরে কেঁদে এভাবেই স্বামীর মৃত্যুর খবর বলছিলেন জেসমিন বেগম। হাসপাতালে থাকা নিথর দেহ দেখিয়ে আহাজারি করছেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে যে স্বামীসহ একসঙ্গে বসে ভাত খাচ্ছিলেন মুহূর্তের হামলায় স্বামী সেলিম মিয়া (৪৫) চিরতরে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন পরপারে।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার নাজিরা ব্যাপারীপাড়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাত পেয়ে প্রাণ হারান সেলিম মিয়া। তিনি একই গ্রামের মৃত বদরুজ্জামান বাদশাহ মিয়ার একমাত্র ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ দুই নারীসহ তিন জনকে আটক করেছে। সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ব্যাপারীপাড়া গ্রামের জনৈক কুদরতের বাড়ির পাশে আব্দুল আহাদ নামে এক ব্যক্তির বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছিল। ওই নির্মাণকাজ দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন সেলিম ও তার চাচাতো ভাই জামাল। মঙ্গলবার দুপুরে সীমানা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বাড়ির নির্মাণ কাজে বাধা দেন কুদরত ও কাওছার। এ নিয়ে জামাল ও নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান তারা। খবর পেয়ে সেলিম গিয়ে জামাল, কুদরত ও কাওছারকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগে কুদরত, তার ভাই রেজাউল, কাওছার আলী, লিয়াকত ও কুদরতের দুই ছেলে স্বপন ও শয়ন লাঠিসোঁটা নিয়ে সেলিম ও জামালের ওপর হামলা করে। এ সময় মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটে পড়েন সেলিম। জামালের হাত ভেঙে যায়। 
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলিমকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে কুদরত সহ কয়েকজন পালিয়ে যান। ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ কুদরতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩২), ভাই লিয়াকত আলী (৪০) ও আরেক ভাই কাওছারের স্ত্রী মল্লিকা বেগমকে (৪০) আটক করে থানায় আনে।

হামলায় আহত জামাল বলেন, ‘আমি ও সেলিম বাড়ি তৈরির কাজ দেখাশোনা করি। কিন্তু আজ দুপুরে কাওছার ও কুদরত মিলে কাজে বাধা দেয়। পরে হঠাৎ তারা সবাই মিলে আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় তাদের লাঠির আঘাতে সেলিম মারা যায়। সামান্য বিষয় নিয়ে ওরা আমার ভাইটাকে মেরে ফেললো। আমি সবার বিচার চাই।’

নিহত সেলিমের মামা আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, ‘অন্যের বিবাদ থামাতে গিয়ে সেলিম প্রাণ হারিয়েছে। ওর ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। আমরা এ ঘটনায় থানায় মামলা করবো।’

ওসি খান মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন জনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’