পরিবার নিয়ে ব্রিজে বসবাস করছেন দিনমজুর দম্পতি

ভূমিহীন দিনমজুর দম্পতি গোলাম মোস্তফা ও সুফিয়া বেগম। নিজেদের কোনও জমি নেই। অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ঘর করে দিন যাপন করলেও সম্প্রতি সেখান থেকেও উচ্ছেদ করা হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে এই ভরা বর্ষায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নির্মাণাধীন চিলমারী-হরিপুর মহাসড়কের একটি নবনির্মিত ব্রিজের ওপর। মাথার ওপর ঝড়-বৃষ্টি নিয়ে সেখানেই পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করছেন।

এ দম্পতি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের কলেজ মোড় সবুজপাড়ার বাসিন্দা। হতদরিদ্র পরিবারটি ভূমি ও গৃহহীন হলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনও সরকারি ঘর। দীর্ঘদিন অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে জীবনযাপন করলেও বর্তমানে সেই জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়ে এই দম্পতি তাদের এক মেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়ে সেতুর ওপর চালা দিয়ে খুপরি করে জীবনযাপন করছেন। এক সপ্তাহ ধরে এভাবেই চলছে তাদের জীবন। চলমান বৃষ্টিপাত তাদের এই ভাসমান জীবনের বিড়ম্বনা আরও বহুগুণ বাড়িয়েছে। অসহনীয় এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সরকারের কাছে জায়গা ও ঘরের দাবি জানিয়েছেন।

গোলাম মোস্তফা জানান, তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে বিয়ে করে স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকে। কোনও টাকা-পয়সা দেয় না। এক মেয়ে স্বামীর সংসারে থাকলেও আরেক মেয়ে দুই সন্তান নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকেন। বাস্তুহারা হওয়ায় পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি এখন কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, এই ভেবে কূল পাচ্ছেন না।

kurigram1

তিনি বলেন, ‘কয়েকবছর ধরে অন্যের জমিত ঘর করি পরিবার নিয়ে বাস করছিলাম। কয়দিন আগে সেখান থাকি তুলি দিছে। যার জমি তাই আর থাকপার দিবার নয়। কূল না পায় ব্রিজের ওপর কোনোরকম চালা বানেয়া আশ্রয় নিছি। কিন্তু এই বৃষ্টির দিনত খ্যাতা বালিশ সউগ ভিজি যায়, কেমন করি থাকি! সরকার এখনা জায়গা আর ঘর দিলে হামার নিস্তার হয়।’

সুফিয়া বেগম বলেন, ‘অভাবের সংসারত খুব টানাপোড়নের মধ্যে আছি। ইয়ার মধ্যে জায়গা জমি নাই। ব্রিজের ওপরত চালা করি আছি। ঝরিত সেটাইও ভিজি যাওয়া নাগে। স্বামী সউগ সময় কাজও পায় না। খুব কষ্টে জীবন চলবার লাগছি। সরকার একটা ঘর দিলে আমাদের এই কষ্ট দূর হইলো হয়।’ একটি স্থায়ী আবাসের দাবি জানান।

থানাহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। ওই দিনমজুরকে সরকারি ঘর দিতে চাইলেও তারা ওই গ্রাম ছেড়ে যেতে রাজি হননি। তারা চাইলে পরবর্তী বরাদ্দে তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।’

ঘর পাওয়ার প্রস্তাব পেলেও না নেওয়ার প্রশ্নে দিনমজুর গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাক আরেক ইউনিয়নের চর কড়াইবরিশালে ঘর দিতে চাইছে। আমি এই গ্রাম ছাড়ি চরে যাইতে চাই না। এখানেও তো অনেক জায়গা আছে। আমাক এই গ্রামত থাকার ব্যবস্থা করি দেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে ঘর বরাদ্দ নেই। তবে তারা যদি চান তাহলে চর এলাকায় থাকার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।’ খোঁজ খবর নিয়ে অসহায় এই দম্পতির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।