ঈদের সবচেয়ে ‘বড়’ জামাতের মুসল্লিদের জন্য থাকছে বিশেষ ট্রেন

পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এশিয়া উপমহাদেশের আয়তনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দিনাজপুরের গোড়-এ শহীদ মাঠ। এবার এই মাঠে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা থাকছে। এখানেই ঈদে দেশের সবচেয়ে বড় জামাত হতে পারে।

ইতোমধ্যেই এই মাঠে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সমান করা হয়েছে মাঠ। দাগ টানা, রঙ করা, ওজুর ব্যবস্থা ও অস্থায়ী টয়লেটের কাজও সম্পন্ন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারেও এই মাঠে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম হবে এবং সেই মোতাবেক আয়োজন থাকছে।

শুধু সুবিধাই নয়, নিরাপত্তাতেও নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। মাঠের চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। ঈদগাহ মাঠজুড়ে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি কাতারে সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। মাঠে মোকাব্বির ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যেই গত কয়েকদিন ধরেই জেলা শহর ও শহরের আশপাশে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সকাল ৭টা থেকে মুসল্লিরা শুধুমাত্র জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে মাঠের ১৭টি প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। এ সময় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে। ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মাঠটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠের চারপাশে পুলিশ সদস্যরা ও টহল ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে স্বাস্থ্য ক্যাম্পও, যাতে করে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া যায়।

গোড়-এ শহীদ মাঠ

জেলা শহরের পাহাড়পুর এলাকার সফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই এখানে ঈদের নামাজ পড়ি। ঈদের সময় আমাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসেন, তারাও নামাজ আদায় করেন। বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব মেলে এমন বিশ্বাসও রয়েছে।

তার সঙ্গে থাকা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই ঈদগাহ ময়দান ও মিনার আমাদের অহংকার। এখানে বড় জামাত হয়, ফলে দিনাজপুরের নাম এখন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

বালুবাড়ী এলাকার রফিক বলেন, আমরা প্রতিবছরই এখানে নামাজে অংশগ্রহণ করি। এখন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এখানে আসেন। আমাদের খুবই ভালো লাগে। এবার তো দুটি ট্রেন দেওয়া হবে শুনেছি, এটা তো বড় বিষয়।

ঈদগাহ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা ও মূল পরিকল্পনাকারী হুইপ ইকবালুর রহিম জানান, গত ঈদুল ফিতরের জামাতে ছয় লক্ষাধিক মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। এবারও ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন- এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিশাল এই জামাতে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও জেলাসহ আশপাশের জেলা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা যাতে করে আসতে এবং নির্বিঘ্নে বাড়িতে ফিরতে পারেন সে জন্য দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন থাকবে। এই ট্রেনের ব্যবস্থা এবারই প্রথম, ফলে এবার মুসল্লিদের সমাগম আরও বাড়বে। প্রচার-প্রচারণা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। ঈদের নামাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এবারও নামাজে ইমামতি করবেন জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাশেমী।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ২২ একর আয়তনে এশিয়া উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। মিনাটিতে ৫২টি গম্বুজ রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছয়টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের কারণে এই মাঠে ঈদের নামাজ হয়নি। ২০২২ সাল থেকে পুনরায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলতি বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজে একসঙ্গে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।