ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে এই নদীর পানি। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
এতে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা ও লালমনিরহাট জেলার দুই উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবারে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট সকাল ৬টায় ব্যারাজ পয়েন্টে পানি পরিমাপ করা হয় ৫২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে।
আজ পাউবোর পানি পরিমাপক (গেজ পাঠক) নুরুল ইসলাম জানান, সকাল ৬টায় ৫২ দশমিক ১২, সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ১৫, দুপুর ১২টায় ৫২ দশমিক ১৮, বিকাল তিনটায় ৫২ দশমিক ২৬ ও সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, জেলার ডিমলায় পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চলের ১০ গ্রামের প্রায় এক হাজার ৭০০ পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। এসব পরিবারের মধ্যে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
অপরদিকে, উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ও পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ডাউয়াবাড়ি কালিগঞ্জ, ঝাড়সিংহেশ্বর, খগারচর, বাংলাপাড়া, উত্তর খড়িবাড়ী, বাইশপুকুর ও জলঢাকার ফরেস্টের চর, ভাবনচুর, ডাউয়াবাড়ী ও জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের প্রায় ১০ গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, আমন বীজতলা, ধান ক্ষেত ও ফসলি জমি। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর এবং গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশ সেখানে কাজ করছে। এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদৌলা প্রিন্স বলেন, আজ সন্ধ্যা ৬টায় হঠাৎ ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার) ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের সবকটি (৪৪) জলকপাট (স্লুইস গেট) খুলে রেখে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।