রংপুরের নেতাদের ঢাকায় ডেকে কড়া নির্দেশ দিলো আ.লীগ

রংপুর জেলা, মহানগর ও তিন উপজেলার নেতাদের ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তিন ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। সেখানে সাত দিনের মধ্যে মহানগরীর ছয় থানা কমিটি অনুমোদন এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে দুই উপজেলার অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১২ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহাজাহান খান ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক চলে। সেখানে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাদায়েত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, জয়নাল আবেদীন ও আনোয়ারুল ইসলাম ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাফিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, মিঠাপুকুর, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন মহানগর আওয়ামী লীগের ছয় থানা কমিটি গঠন না করায় দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা বিরাজ করছিল। এক বছর আগে ছয় থানার সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।

অন্যদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। তার জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ প্রার্থী চতুর্থ স্থান লাভ করে। এ ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। 
আহ্বায়ক একক সিদ্ধান্তে কয়েকটি ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই সঙ্গে মহানগরীর ছয় থানার মধ্যে কয়েকটি থানা কমিটি নিয়ে তার সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে সাবেক জেলা কমিটির নেতাদের ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। এর ফলে রংপুর নগরীর দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই আসা বন্ধ করে দেন। এর প্রভাব পড়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা নিয়ে।

এ ছাড়াও রংপুর-৫ আসন মিঠাপুকুর উপজেলা পাঁচ বছর ধরে কমিটিবিহীন চলছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করা নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশিকুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে তিন ঘণ্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। সেখানে দুই গ্রুপ প্রকাশ্যেই আলাদাভাবে দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। গত ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক প্রস্তাবিত ৫৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

এই কমিটিতে সরকারি কর্মচারী, মৃত ব্যক্তি, বিদেশে বসবাসকারীসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ থাকায় দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করে।

অপরদিকে কাউনিয়া উপজেলার এমপি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির উপস্থিতিতে তাকে স্বাগত জানানো নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের এক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়ে। অন্যদিকে, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কমিটি গঠন নিয়েও নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি চরমে পৌঁছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে দলীয় কোন্দল মেটাতে ঢাকায় নেতাদের ডাকা হয়।

বৈঠকে ছয় থানার কমিটি অনুমোদন দিয়ে সাত দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয় মহাগনগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিকে। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সবাই মিলেমিশে কাজ করার এবং আগামী নির্বাচনে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করতে কঠোর নির্দেশ দেয়।

অন্যদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত মিঠাপুকুর উপজেলা কমিটি সম্পর্কে ওই আসনের সংসদ সদস্য আশিকুর রহমান বিদেশে অবস্থান করায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়ার কথা জানানো হয়। সেই সঙ্গে পীরগাছা ও কাউনিয়ার দলীয় কোন্দল নিরসনে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাফিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দুজনেই এসব নির্দেশনার কথা জানান। 
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছয় থানার কমিটি অনুমোদনসহ এসব নির্দেশের বিষয় নিশ্চিত করেন।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের কোনও নেতা ফোন না ধরলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন নেতা তদন্ত কমিটি গঠনসহ অন্যান্য তথ্য নিশ্চিত করেন।