গোপনে নিয়োগ, বাতিলের দাবিতে বিদ্যালয়ে তালা

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় গোপনে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। পরে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চাঁন মিয়ার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভ শেষে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনির কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। 

রবিবার (২২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের টাপুরচর বালুরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বিদ্যাললের পাঠ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ উপলক্ষে দাফতরিক কাজ চলমান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজশে অফিস সহায়ক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে গোপনে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষকের শ্যালিকা মর্জিনা বেগমকে অফিস সহায়ক এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিতু রানীকে আয়া পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চাঁন মিয়া গোপনে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও সে তথ্য ১১ মাস পর ফাঁস হয়। এরপর শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মচারীসহ এলাকাবাসী নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেন এবং বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু নিয়োগ বাতিলে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় রবিবার বিদ্যালয়ের ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে।

তালা দেওয়ার আগে বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সভা করেন বিক্ষোভকারীরা। মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন প্রভাষক খলিলুর রহমান, প্রভাষক মিজানুর রহমান, ব্যাংকার নরুল ইসলাম, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরুল হুদা, আশরাফ আলী, শিক্ষক প্রতিনিধি কামরুজ্জামান, শেখ আব্দুল্লাহ, মোখলেছুর রহমান, সহকারী শিক্ষক ইউসুফ আলী, আওরঙ্গজেব ও আমির হামজা প্রমুখ।

বিক্ষোভ শেষে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনির কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়

প্রতিবাদ সভায় বক্তরা বলেন, ‘অবিলম্বে এ অবৈধ নিয়োগ বাতিল করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে অপসারণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে। আমরা আজ তালা লাগিয়েছি। শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করেছেন। আগামীতে আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেবে।’ এ নিয়োগের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বক্তারা।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনি ও সভাপতি চাঁন মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘বিদ্যালয়ে তালা দেওয়ার খবর শুনেছি। অভিযোগের বিষয়ে একাডেমিক সুপারভাইজার তদন্ত করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রতিবেদন দেবেন। তারা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) মো. শামছুল আলম জানিয়েছেন, তিনি নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

শামছুল আলম বলেন, ‘ওই প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে বিক্ষোভকারীরা বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে ঠিক করেননি। তারা আইন হাতে তুলে নিয়েছেন। তাদের তালা খুলে দেওয়ার জন্য বলেছি।’