পঞ্চগড়ে পালিত হচ্ছে ‘ভিতরগড়’ দিবস

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীনতম দুর্গনগরী ‘ভিতরগড়’। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব কোণে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটারব্যাপী এলাকা নিয়ে অবস্থিত এই প্রাচীনতম দুর্গনগরী।

ভিতরগড় দুর্গনগরীকে প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্যান (Archaeological Park)  হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করাসহ এটিকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান (Heritage Site) হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার প্রথমবারের মত ভিতরগড় দিবস উদযাপন হতে যাচ্ছে। নানা আয়োজন ও কর্মসূচিতে সাজানো হয়েছে ভিতরগড় দিবসটি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ও ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটি যৌথভাবে দিবসটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধান অতিথি হিসেবে ভিতরগড় দিবসের শুভ উদ্বোধন করবেন।

দুর্গনগরীর মধ্যবর্তী মহারাজা দিঘীর উত্তর-পশ্চিম কোণের খোলা মাঠে দিবসের নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা ও ভিতরগড় দুর্গনগরীর পতাকা উত্তোলন, প্রত্নস্থল ও প্রত্ননিদর্শন বিষয়ক ৪০টি আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বিভিন্ন রকম স্থানীয় পিঠার উৎসব, ‘ভিতরগড় প্রত্নস্থল সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং ভার্চুয়াল ট্যুর’ শীর্ষক সেমিনার। 

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সেন্টার ফর আর্কিওলজিক্যাল স্টাডিজের প্রফেসর এবং পরিচালক ড. শাহনাজ হুসনে জাহান।

ভিতরগড় দিবস উপলক্ষে এখানে দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্য মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় নাগরদোলা, সাপের খেলা, লাঠি খেলা, যাদু প্রদর্শন, সত্যপীরের গানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রকমের পণ্যের পসরা বসবে এ মেলায়।

 

ভিতরগড় দিবসের দিনব্যাপী এ উৎসবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আকতারী মমতাজ, সাবেক বাণিজ্য সচিব ও ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটির সভাপতি সোহেল আহমেদ চৌধুরী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন, ইউল্যাবের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ইমরান রহমান, ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটির সদস্য সচিব হাবিবুল্লাহ এন করিম, রানা হায়দার, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল, পুলিশ সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. শাহনাজ হুসনে জাহান জানান, দেশে বিদেশে ভিতরগড়কে পরিচিত করার জন্য ভিতরগড় দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিবছর এ দিবসটি মার্চ মাসের প্রথম শনিবার ভিতরগড় দিবস উদযাপন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্য কর্মসূচির পাশাপাশি দুই দিনব্যাপী মেলা হবে। মেলা চলবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটি জানান, বাংলাদেশ এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় প্রত্নস্থল পঞ্চগড়ের ভিতরগড়। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের প্রফেসর ও প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. শাহনাজ হোসনে জাহান জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, ভারত, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কাসহ ১৮টি দেশে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ২০০৮ সালে ভিতরগড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক পুরাকীর্তির ইতিহাস ও গুরুত্ব তুলে আনতে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ, গবেষণা ও খনন কাজ শুরু হয়। এসময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কর্মকর্তা, রংপুর তাজহাট যাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো.জহুরুল হকসহ স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

 

জানা যায়, ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১১ বার খনন কাজ করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের প্রায় ২১০ জন শিক্ষার্থী খননে অংশ নেন। এখনও খনন কাজ চলছে। ভিতরগড় প্রত্নস্থলের ইটের ৪টি প্রাচীর বা আবেষ্টনী দেয়ালের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ইটের দেওয়াল খনন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এই দুর্গনগরীতে আবেষ্টনী দেয়াল, স্তুপ (বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ) ও ক্রুশাকৃতির মন্দিরসহ ৯টি স্থাপত্যিক কাঠামোসহ ছোটখাট বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এরমধ্যে ৭টি মন্দির ও আবাসস্থল। এসব মন্দির ১৫শ’ বছর আগে নির্মিত। মন্দির ও স্তূপের বের হওয়া অবকাঠামো দেখে রংপুরের তাজহাট যাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. জহুরুল হক ৭ম শতকে নির্মিত বলে ধারণা করছেন। তিনি এই মন্দির ও স্তূপের নির্মাণ শৈলি এবং আকৃতি ও ইটের গঠন দেখে এই ধারণা পোষণ করেন।

দুর্গনগরী ধ্বংসকারীদের হাত থেকে ভিতরগড়কে বাঁচাতে এবং সরকারিভাবে এটিকে প্রত্নস্থল এলাকা ঘোষণার দাবিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ ২০১১ সালের ১৪ জুন হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এরপর আদালত দুর্গ নগরীটিকে প্রত্নতত্ত্বস্থল ঘোষণা এবং মনিটরিং করতে রুল জারি করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল উচ্চ আদালত একটি জাজমেন্ট প্রদান করেন। জাজমেন্টে বলা হয়েছে দুর্গনগরীর ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় কোনওরকম অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না, এবং দুর্গনগরীর কোনও ক্ষতিসাধন করা যাবে না।

 

এছাড়া আদালত দুর্গ নগরী মনিটরিং করার জন্য পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশ নির্দেশ সত্ত্বেও ভিতরগড়ের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা কোনও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। উল্টো ধ্বংসকারীরা সাংবাদিকসহ বাধা প্রদানকারীদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে।

ভিতরগড় দুর্গ নগরীকে প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাসহ দুর্গ নগরীটিকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত করে তুলতে ২০১৪ সালে গঠন করা হয়েছে ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটি। সোহেল আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি এবং হাবিবুল্লাহ এন করিমকে সদস্য সচিব করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহ-সভাপতি হিসেবে প্রফেসর শরিফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ হিসেবে জালাল আহমেদ, সদস্য হিসেবে ড. কাজী আনিস আহমেদ, রানা হায়দার, মুহাম্মদ লুৎফুল হক, প্রফেসর পারভীন হাসান, ড. শাহনাজ হুসনে জাহান, গোলাম মইনউদ্দিন, জাহিদুর রহমান এবং এসডাব্লিউএম সালেহউদ্দিন। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খনন কাজে অনুমতি, মনিটরিং করাসহ সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ভিতরগড় দুর্গনগরীকে পুরাকীর্তি আইনের আওতায় সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা দেননি। ফলে স্থানীয়রা অবাধে দুর্গনগরীর স্থাপনা ধ্বংস করছে বলে অভিযোড় পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভিতরগড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন ইট ও ইটের টুকরো। দুর্গপ্রাচীর কেটে বাড়ি-ঘর নির্মাণ, দুর্গপ্রাচীর থেকে ইট খুলে অন্য কাজ করাসহ বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে দুর্গপ্রাচীরের বিভিন্ন অংশ কাটা হয়েছে। কোথাও কোথাও দুর্গ প্রাচীরের কোনও অংশই নেই।

 

গড় এলাকায় যত্রতত্র মাটি কেটে ঘর-বাড়ি উত্তোলন, শিল্প ও কৃষি ফার্মসহ স্থাপনা গড়ে তোলা, স্থায়ীভাবে চা বাগান স্থাপন, গড় এলাকার জমি, পুকুর ও পরিখাগুলো এনজিও ও ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দেওয়ায় দুর্গ নগরীর পরিবেশ নষ্টসহ দুর্গনগরীর ঐতিহ্য বিলীনে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কিছু প্রভাবশালী মানুষ। এসব কারণে প্রাচীন এই দুর্গ নগরীর ঐতিহ্য বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটি। এজন্য ভিতরগড়কে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পুরাকীর্তি আইনের আওতায় এনে পুরাকীর্তি হিসেবে গেজেট প্রকাশ করার দাবি করেছেন সংগঠনটি।

জানা গেছে, ভিতরগড় ছিল জল্পেশ্বর রাজার রাজধানী।‘কামরূপ বুরুঞ্জিতে’ জল্পেশ্বরকে বলা হয়েছে পৃথু রাজা হিসেবে। পৃথু রাজা এই পঞ্চগড়ে অবস্থান করেই রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন। পৃথু রাজা প্রাচীন কামরূপ রাজ্য থেকে রাজ্য হারা হয়ে পঞ্চগড়ে আগমন করেন। আর ভিতরগড় ছিল তার রাজধানী।

উনিশ শতকের প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক বুকানন হ্যামিল্টনের মতে, ভিতরগড় রাজ্যের সীমা ছিল তৎকালীন বর্তমান পঞ্চগড় জেলার দুই তৃতীয়াংশ, বর্তমান তেঁতুলিয়া উপজেলা ও ভ্রাতের জলপাইগুড়ি এলাকা। পৃথুরাম রাজ্যহারা হয়ে ভিতরগড়ে নতুন রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন বিধায় প্রথমে রাজধানীকে সুরক্ষিত করেন। এজন্য মাটি ও ইটের চার স্তরের প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন। প্রতিটি গড় বা প্রাচীরের বহিরভাগে খনন করেন সুগভীর পরিখা। এ এলাকার তালমা নদীর প্রবাহকে সংযুক্ত করা হয় পরিখার সঙ্গে। ১৮০৯ খৃঃ ড. বুকানন হ্যামিল্টন ভিতরগড় পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভিতরগড় নগরীটি ৪টি অভ্যন্তরীণ গড়ের সমন্বয়ে গঠিত। গড়গুলো একটি অপরটির অভ্যন্তরে অবস্থিত। সবচেয়ে ভেতরের গড়ে অবস্থান ছিল রাজ প্রাসাদের। দুর্গ প্রাচীরগুলো ইট ও মাটির মিশ্রণে তৈরি। দুর্গ নগরীটি কয়েকটি ক্ষুদ্র নগরীতে বিভক্ত ছিল।

 

পূর্ব বাহুর সবচেয়ে বাইরের নগরীতে নিম্নশ্রেণির মানুষেরা বসবাস করত। বর্তমান সময়ের অনেক গ্রামের নামের সঙ্গে এর প্রমাণ মেলে। যেমন-একটি গ্রামের নাম মেহনা ভিটা। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এর অর্থ যুদ্ধাস্ত্র তৈরির স্থান। যুদ্ধের ঘোষক, নাকাড়া ও বাদক দল এখানে অবস্থান করত। এই গ্রামের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত কামার ভিটা। এখানে লৌহজাত দ্রব্য ও অস্ত্র তৈরি বা সংস্কার হতো। কামার ভিটার সোজা ওপরে উত্তরমুখী রয়েছে সুকদেব পাড়া, বিদ্যাভিটা ও পকলাভিটা। এই স্থানগুলো শিক্ষা প্রদান ও অন্যান্য সামাজিক ভূমিকা পালন করা হতো। মেহনা ভিটা থেকে পূর্ব দিকে সমান্তরালভাবে অবস্থিত নরদেব পাড়া। এখানে যাজক ও ধর্মচর্চাকারী শ্রেণির অধিবাসীরা বসবাস করতেন। নরদেব পাড়ার সোজা উত্তরে অবস্থিত সেনপাড়া, ধোপাপাড়া, চুনপাড়া, ছোটকামাত ও বড়কামাত। এর কাছে হরিয়ার পাড়া বা হরিয়ার ঘরে মেথর ও ডোম শ্রেণির লোক বাস করত।

প্রথম গড়ের উচ্চতা ২০ ফুট উঁচু ও ১২ ফুট প্রস্থ। এটি ছিল সম্পূর্ণ মাটির তৈরি। দ্বিতীয় গড়ের উচ্চতা ছিল প্রায় ১৫ ফুট ও প্রস্থ ছিল ১০ থেকে ১২ ফুট। এটি ছিল মাটির সঙ্গে ইটের গাঁথুনি। সর্বশেষ প্রাপ্ত ইট দেখে অনুমান করা হয় এই ইটের মাপ ছিল দশ গুণন দশ গুণন আড়াই ইঞ্চি। এই গড়ের মাত্র দুটো দরজা বা তোরণ ছিল। উত্তর দিকের তোরণের নাম ‘কালদুয়ার’ এবং দক্ষিণের নাম ছিল ‘যমদুয়ার’। এই দুর্গ প্রাচীরের কিছুদূর পর পর নির্মিত ছিল পার্শ্ববুরুজ। এগুলো অর্ধ গোলাকার। সম্ভবত এই বুরুজে সেনা প্রহরার ব্যবস্থা ছিল।

 

এর ভেতর দিয়ে খনন করা ছিল বিশাল পরিখা। ভিতরগড় দুর্গের ভিতরে প্রতিটি পরিখায় পাশ্ববর্তী ‘তালমা নদী’ থেকে প্রবাহ এনে এই পরিখায় সংযোগ দেয়া হয়। তালমা নদীতে বিকল্প পথে পানি আনার জন্য নির্মাণ করা হয় একটি বাঁধ। বাঁধের নাম রাখা হয় বীরবাঁধ। রাজবাড়ীকে কেন্দ্র করে যে ছোট দুর্গ গড়ে উঠেছিল তা ছিল সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। রাজ প্রাসাদ এবং মহারাজার দিঘী পরিবেষ্টিত নগরীটি পূর্ব-পশ্চিমে ১৯৩০ গজ দীর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে ছিল ৩৪৫ গজ। মহারাজার দিঘী হতে প্রায় ৪০০ গজ দূরের ইটের প্রাচীর ঘেরা নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রাজবাড়ী রয়েছে। এ স্থানে রয়েছে কয়েকটি ইমারত ও একটি কূপের ধ্বংসে স্তূপ। রাজবাড়ী থেকে কিছুটা উত্তরে রয়েছে কয়েকটি প্রাচীন পুকুর। পুকুরের উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে প্রাচীণ ইটে পরিপূর্ণ দু’টি ছোট ঢিবি।

জনশ্রুতির মতে, উত্তরের ঢিবিটি ছিল মন্দির এবং দক্ষিণের ঢিবিটি ছিল রাজ দরবার। রাজবাড়ী থেকে রাজ দরবার পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণ করা হয়। মহারাজার দিঘী কে, কবে, কেন খনন করেছিলেন তার কোনও ইতিহাস জানা যায়নি।

অনেকের মতে, পৃথু রাজা এটি খনন করেন। পৃথু রাজার শেষ পরিণতি সম্পর্কে স্থানীয় মতবাদটি হচ্ছে “কীচক” নামক এক শ্রেণির অস্পৃশ্য, নিম্ন জাতের বাহিনী দক্ষিণ দিক থেকে ভিতরগড় রাজধানী আক্রমণ করেন। এতে পৃথু রাজা “কীচক” নামক জাতের সংস্পর্শে ধর্মনাশের ভয়ে ধনরত্ন ও পরিবার পরিজন নিয়ে মহারাজার দিঘীতে আত্মহনন করেন।

/এআর/টিএন/