দিনে গরম রাতে শীত, এ কেমন আবহাওয়া?

দিনে প্রচণ্ড গরম আবার রাতে প্রচুর শীত অনুভূত হচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন আবহাওয়া বিরাজ করছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে। বিরূপ আবহাওয়ায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে সূর্য আকাশের মাঝ বরাবর থাকায় দিনের বেলায় রোদের তীব্রতা রয়েছে। তবে বাতাসের ময়েশ্চার কম হওয়ায় ওই গরম স্থায়ী না হওয়ায় রাতে শীত পড়ছে। যদিও মে মাসের দিক থেকে ভ্যাপসা গরম বিরাজ করবে জেলায়। সেইসঙ্গে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এতে বাতাসের ময়েশ্চার বাড়বে, স্থায়ী হবে ভ্যাপসা গরম।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, গত কয়েকদিন ধরে দিনাজপুরে দিনে প্রচণ্ড গরম বিরাজ করছে। আর রাত থেকে শীত অনুভূত হচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় (বিকাল ৩টায়) ৩৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের সোমবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই দুই দিনের হিসাব অনুযায়ী, দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে রাজশাহী বিভাগ এবং দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় তা প্রশমিত হতে পারে।

জেলার মানুষজন বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে জেলায় দিনের বেলায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে। রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে এমন ঝলসানো অবস্থা। যা থাকছে মধ্যরাত পর্যন্ত। ফলে ফ্যান বা এসি চালিয়ে রাখতে হয়। তবে মধ্যরাতের পর আবারও ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। সকাল পর্যন্ত গায়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে হয়।

এমন তাপমাত্রার প্রভাবে একপ্রকার ক্লান্ত মানুষজন। বিপাকে পড়েছেন অনেকে। তারা বলছেন, এই তাপমাত্রা শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শিশু ও বয়স্ক লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।  

শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকার খাদেমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজে একটি আবহাওয়া বিরাজ করছে। দিনে গরমে ফ্যান ছাড়া থাকা যাচ্ছে না। আবার রাতে প্রচুর শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে ঠান্ডা-গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছি আমরা। পুরো ধকল যাচ্ছে শরীরের ওপর দিয়ে।’

কালিতলা এলাকার ইজিবাইকচালক সফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দিনে রোদে বাইরে যাওয়া যায় না। ঘাম ছুটে যায়। আবার রাতে ঠান্ডা। রাতে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়। এ কেমন আবহাওয়া?’ 

ঘাসিপাড়া মোড় এলাকার অটোবাইকচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সকালে হালকা গরম কাপড় পরে বের হয়েছি। দুপুর হতেই গায়ে গেঞ্জি পর্যন্ত রাখা যাচ্ছে না। গরমে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এটি কেমন আবহাওয়া আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের কারণে এখন সূর্য আকাশের ঠিক মাঝ বরাবর অবস্থান করছে। ফলে প্রচণ্ড তাপ বিকিরণ করছে। কিন্তু বাতাসে ময়েশ্চার কম। এজন্য গরম স্থায়ী হচ্ছে না। রাত থেকেই আবার ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। মে-জুন মাসে গিয়ে বাতাসের ময়েশ্চার বাড়বে, ফলে ভ্যাপসা গরম পড়বে। মূলত এখন বৃষ্টি নেই বলেই বাতাসে ময়েশ্চার কম। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’