কাস্টমস ও বন্দরের নানামুখি হয়রানি এবং বন্দরের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কমেছে। এসব জটিলতা নিরসন করা হলে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি যেমন বাড়বে তেমনি রাজস্ব আহরণ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (১২ মে) দুপুরে হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম, সহসভাপতি মুশফিকুর রহমান, কাস্টমস ও বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিঠু উপস্থিত ছিলেন।
ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিলি দিয়ে আগে ১৫০-২০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হলেও বর্তমানে ২০ ট্রাক পণ্য আমদানি হচ্ছে। আমদানি-রফতানি কমায় কমেছে সরকারের রাজস্ব আহরণ। এর মূল কারণ বন্দর দিয়ে যেকোনো পণ্য ভারত থেকে আমদানি হলে কাস্টমস এইচএসকোড নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। ফলে অনেক পণ্যের সঠিক পরীক্ষণ না হওয়ায় বিপরীতে জোরপূর্বক কালো আইনের মাধ্যমে ২০০ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত লোড দিয়ে থাকে। এতে নির্ধারিত শুল্কের অনেক বাড়তি দিতে হয় আমদানিকারকদের। শুল্ক পরিশোধ করতে গিয়ে আমদানিকারকরা লোকসানে পড়েন। এ ছাড়া এখানে কাস্টমসের কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পদায়ন থাকার কথা থাকলেও নেই। ফলে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রংপুরের কমিশনারের কাছে যেতে হয়। সেখানে পণ্য ছাড় করাতে বাড়তি সময় ও বেশি শুল্ক গুনতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া বন্দরে শ্রমিকের মজুরি বাবদ অর্থ পরিশোধ করা হলেও তাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। এতে সময়মতো শ্রমিক কাজে না আসায় পণ্য খালাসে দেরি হয়। নাইট চার্জ হিসেবে প্রতিটি ট্রাকে এক হাজার ২০০ টাকা করে বাড়তি মাশুল গুনতে হয়। অন্য বন্দরে পাথর ও কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও বন্দরের মাশুল পরিশোধ করে নিজস্ব ইয়ার্ডে নিতে পারলেও হিলি বন্দরের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয় না। এসব কারণে আমদানিকারকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও বন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেড আমদানিকারকদের সুবিধার জন্য যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার কথা, সেগুলো এখন পর্যন্ত করেনি। এতে কেমিক্যালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির পর তিন দিন থেকে চার দিন পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ফলে লোড-আনলোড করতে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন আমদানিকারকরা। আবার ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি-রফতানি হলেও ওঠানো-নামানোর জন্য যন্ত্রপাতি বন্দর কর্তৃপক্ষের নেই। এজন্য আমদানি-রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব জটিলতার কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কমেছে। এতে রাজস্ব আয়ও কমেছে। এসব জটিলতা নিরসন করা হলে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি যেমন বাড়বে তেমনি সরকারের রাজস্ব আহরণও বাড়বে।’