মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বড়হাট ও নাসিরপুর এলাকার বাসাবাড়ির লোকজন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছেন। অনেকে বাসা-বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন ।
খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামের নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমরা প্রথমে মনে করেছি আর্মি গুলি করছে। রাত থেকেই গুলির শব্দ শুনতে পাই। জানতাম না যে ওই বাড়িতে জঙ্গিরা থাকতো। আমি মনে করেছি, আর্মি আইছে। আর্মিরা গত বছর ওখানে এসে ট্রেনিং করেছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি শত-শত পুলিশের লোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছি না। ঘরের দরজায় তালা দিয়ে রাখছি।’ আর একই কথা জানালেন একই গ্রামের বাসিন্দা ওসমান আলীও।
নাসিরপুর এলাকার বারিক মিয়া বলেন, ‘শান্তির এলাকায় এখন অশান্তি দেখা দিয়েছে। আমরা ভাবতেই পারিনি যে, লন্ডনির বাগান বাড়িতে জঙ্গি আছে।’
বড়হাট এলাকার গ্রিলমিস্ত্রী কাসেম মিয়া বলেন, ‘সারাদিন ধরে দুইটা টাকা রোজগার করতে পারি নাই। আটকে আছি, বাড়িতে যাইতে পারছি না। মানুষজন ভয়ে দোকানপাটে আসে না। তারপর বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অরও দুর্ভোগ পোহাতে হইছে। আমি এই এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করতেছি। জঙ্গি আছে, এটা জানতাম না।’
একই এলাকার চা-দোকানি জাকির হোসেন জানান, ‘মঙ্গলবার রাত থাকি পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সড়কে সড়কে তল্লাশি চালায়। ভয়ে দোকান পাট বন্ধ করে দেই। সকালে দোকান খোলার পর শুনতে পাই গুলির শব্দ। তখনই আশপাশের দোকান পাট বন্ধ করে অনেকে চলে যায়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ বন্ধ ছিল। বেচা-বিক্রি নাই। আমরার মৌলভীবাজারে তো জঙ্গি থাকার কথা না। আজ জঙ্গিদের কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য অচল।’
বড়হাটের মহরম ভিলা মালিক মহরম মিয়া বলেন, ‘আতঙ্কে আছি। বাচ্চাদের বাসা থেকে হতে দেই নাই। বুধবার সকাল থেকে গুলি ও গ্রেনেডের শব্দে বাইরে যাই নাই।’
মৌলভীবাজার বড়হাট কাউন্সিলর জালাল আহমদ বলেন, ‘এ ঘটনায় আশ-পাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শঙ্কা কাটতে একটু সময় লাগবে।’
মৌলভীবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ারুল ইসলাম (ক্রাইম) বাংলা ট্রিবিউনকে, ‘পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়িতে এবং খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সাধারণ মানুষ ও যান চলাচলে সর্তকতা জারি করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামে আরও একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও সিটিটিসি। দুটি আস্তানাতেই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন হিট ব্যাক’
/এমএনএইচ/