সিলেটে নতুন বাড়িতে ওঠা হলো না লন্ডনে নিহত মকররম আলীর

মকররম আলী
লন্ডনের ফিনসবারি পার্কের মসজিদে হামলায় নিহত মকররম আলীর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সরুয়ালায়। বাড়িতে একমাত্র ভাতিজা ছাড়া আর কেউ থাকেন না। মকররমের পরিবার দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছেন লন্ডনে। মঙ্গলবার (২০ জুন) মকররমের গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা যায় সুনশান নিরবতা। তবে তার মৃত্যুর খবর শুনে গ্রামবাসীসহ অনেককেই খোঁজ খবর নিতে আসছেন। ছেলেমেয়েদের জন্য বাড়ির ভেতরে দোতলা একটি বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন মকররম। কথা ছিল আগামী বছর ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেশে এসে ওই বাড়িতেই উঠবেন। কিন্তু সেই বাড়িতে আর ওঠা হলো না তার।

বাড়িতে থাকা একমাত্র পুরুষ সদস্য মকররম আলীর ভাতিজা জিহাদ আহমদ জাকু জানান, ২০১৫ সালে কোরবানীর ঈদে সবশেষ দেশে আসেন তার চাচা। চাচার পরিবারের সবাই ব্রিটিশ নাগরিক। গ্রামবাসীর কাছে ‘হীরন’ নামে পরিচিত ছিলেন মকররম আলী।সিলেটে মকররম আলীর বাড়ি

চোখ মুছতে মুছতে মকররমের ভাতিজা বলেন, চাচা পুকুরে গোসল করতে পছন্দ করতেন। বাড়ির সামনে পুকুরও তৈরি করিয়েছিলেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে আসলে পুকুরে গোসল করতেন আর মাছ ধরতেন।

পুকুরটি দেখিয়ে জাকু বলেন, ‘চাচা ওউ পুকরি (পুকুর) অনেক শখে করছিলা (করেন)। কিন্তু আইজ (এখন) চাচা নাই।’ তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে তার চাচা ফোন করে বলেন, ‘বাড়ির সব কাজ শেষ। বাড়িটা দেখতে খুব ইচ্ছা করে। আগামী বছরের প্রথম দিকে দেশে আসবো।’

তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট মকররম আলী। তিন বোন বেঁচে থাকলেও ভাইদের মধ্যে আর কেউ বেঁচে নেই।

জানা যায়, মকররম আলীর বয়স যখন ১২ বছর ছিল তখন তিনি পাড়ি জমান লন্ডনে। একটানা প্রবাস জীবন কাটিয়ে বিশ্বনাথের দৌলতপুরে বিয়ে করেন তিনি। কয়েক বছর পর স্ত্রীকেও লন্ডনে নিয়ে যান। সেখানে জন্ম হয় চার মেয়ে ও দুই ছেলের।

সরুয়ালা গ্রামের বাসিন্দা মিনহাজুর রহমান জানান, ‘তার মৃত্যুর ঘটনা জানার পর আমরা গ্রামবাসী হতভম্ব। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’মকররম আলীর বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা

বিশ্বনাথ বাজারে কথা হয় নিহত মকাররমের সহপাঠী ষাটোর্ধ্ব শফিক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মকাররম আলী অইলো (হল) তার পাসপোর্টের নাম। আমরা হক্কলে (সবাই) তারে হীরন নামে চিনি (পরিচয়)। খুব কষ্ট লাগের (লাগছে) হুনিয়া (শুনে) সে নামাজ পড়িয়া (পড়ে) বাসায় যাওয়ার পথে গাড়ির ধাক্কায় মারা গেছে। খুব ভালা (ভালো) মানুষ আছিল (ছিল)। যে গিয়ে (যারা) ই ঘটনা করছে তারে ফাঁসি দেওয়া অইক (হোক)।’

বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক জানান, মকররমের বয়স যখন ১২ বছর তখন তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান। গ্রামের জন্য তার খুব মায়া ছিল। গ্রামের মানুষের সুখে দুঃখে সবসময় পাশে থাকতেন মকররম।

উল্লেখ্য ব্রিটেনের স্থানীয় সময় রবিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি ভ্যান তারাবির নামাজ পড়ে বের হয়ে আসার মুসল্লিদের ধাক্কা দেয়। ওই ঘটনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মকররম আলী নিহত হন। ঘটনাস্থল ফিনসবারি এলাকা থেকে ৪৮ বছর বয়সী একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

/বিএল/এফএস/

আরও পড়ুন-

লন্ডনে পথচারীদের ওপর গাড়ি হামলা

মসজিদকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে লন্ডনে আবার গাড়ি হামলা

লন্ডন মসজিদে হামলাকারীর পরিচয় কী?