বন্ধ হওয়া ধলই চা বাগান শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন কাল

ঈদের আগে হঠা ধলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণায় শ্রমিকদের মাথায় হাতনিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত ধলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করে ধলই টি কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক এম এম ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ টানিয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পরদিন মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সকালে শ্রমিকরা কাজে গিয়ে দেখতে পান বাগানে ফ্যাক্টরির সামনে সাইনবোর্ডে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এই নোটিশ। পরে ফ্যাক্টরির সামনে দিনব্যাপী অবস্থান নিয়ে বাগান বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন সহস্রাধিক চা শ্রমিক।

এই ঘটনায় বুধবার (২৯ জুলাই সন্ধ্যায়) কমলগঞ্জ ইউএনও কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) শ্রমিকদের তাদের সর্বশেষ কর্ম সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঈদের পর ৪ আগস্ট চা বাগান খোলা নিয়ে আলোচনায় বসবে দুই পক্ষ। কমলগঞ্জ ইউএনও কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তার আগে জানা যায়, রাগীব আলীর মালিকানাধীন ধলই চা বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাগানে কর্মরত চা শ্রমিকরা নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তার অপসারণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন গত ২৯ জুন থেকে। পরে প্রশাসন, চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বৈঠক করে আমিনুল ইসলামকে কেন্দ্রীয় দফতরে নিয়ে যায়। বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জাকারিয়া হাবিবকে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার ১ মাস পর ২৭ জুলাই রাতে হঠাৎ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তার অভাবে দেখিয়ে বাগানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কৃর্তপক্ষ। এতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বাগানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

বাগানের কয়েকজন চা শ্রমিক জানান, সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে ব্যবস্থাপক ও বাগান কর্মচারীরা তাদের দিয়ে তিনগুণ চা পাতা উত্তোলন করান। একই কথা জানান চা-বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি গৌরাঙ্গ নায়েক, সাধারণ সম্পাদক সেতু রায়, ইউপি সদস্য শিব নারায়ণ, সাবেক ইউপি সদস্য তুলসী মাদ্রাজি ও নারী শ্রমিক খোদেজা বেগম। কারখানার বাবু গোলাম হোসেন শ্রমিকদের বলেছিলেন, মঙ্গলবার বিদ্যুৎ থাকবে না। তাই যেন তারা সোমবার অতিরিক্ত কাজ করেন। সে হিসেবে তারা একদিনে তিনগুণ কাজ করেন। কিন্তু সন্ধ্যায় কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক এম এম ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ টানিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য চা বাগানটি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বাংলা ট্রিবিউন বলেন, যে অজুহাত দেখিয়ে চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তা শ্রম আইন পরিপন্থী। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

অবিলম্বে ধলই চা বাগান খুলে না দিলে দেশের বিভিন্ন চা বাগানে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানায় শ্রমিকরা।

ধলই চা বাগানের অভিযুক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ একটি পক্ষ বাগানে শ্রমিকদের দিয়ে নানা অসন্তোষ সৃষ্টি করে আসছে। এ কারণে বাগানটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।

কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান বলেন, ধলই চা বাগানের পরিস্থিতি যাতে ভালো থাকে সে জন্য সেখানে মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশেকুল হক বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষ আমাকে নোটিশের একটি কপি দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বুধবার (২৯ জুলাই) দুপুরে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) শ্রমিকদের চলতি সপ্তাহের মজুরি প্রদান করবে মালিক পক্ষ। বাগান বন্ধের বিষয়টি সমাধানের জন্য ঈদের পর ৪ আগস্ট দুই পক্ষকে নিয়ে আবার বসবো।