দেশে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘সঙ্গনিরোধ ব্যয়’ খাতে মৌলভীবাজারে বরাদ্দ দেওয়া দুই কোটি ৭৭ লাখ ৫ হাজার ৮৮৮ টাকার মধ্যে ৯১ লাখ ১২ হাজার ২৯৯ টাকা ফেরত চলে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ হয়েছে এক কোটি ৮৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮৯ টাকা। এ বিষয়ে জেলার সচেতন ব্যক্তিদের অভিমত, বরাদ্দের টাকা ফেরত না দিয়ে জেলার স্বাস্থ্য খাতে খরচ করা গেলে তৃণমূলের মানুষের চিকিৎসাসেবা আরও বৃদ্ধি পেত। তবে জেলা সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, সরকারের বরাদ্দ করা সুনির্দিষ্ট খাতের টাকা ভিন্ন খাতে খরচ করার এখতিয়ার কারও নেই।
জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঁচটি আইসিইউ বেড ছাড়া উপজেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ কিংবা সিসিইউ বেড নেই। নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ‘বরাদ্দ টাকা ফেরত না পাঠিয়ে জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় এসব টাকা কাজে লাগানো যেত। বর্তমানে জেলায় যেভাবে প্রতিদিন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন এতে সঠিক চিকিৎসাসেবা পাওয়া নিয়ে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ‘কোয়ারেন্টিন এক্সপেন্সিভ বা সঙ্গনিরোধ ব্যয় খাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে বরাদ্দ দিয়েছিল তা সঠিকভাবে খরচ হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে এর চেয়ে বেশি খরচ না হওয়ায় তা মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেছে। এই বরাদ্দ জেলার সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরাসরি যাওয়ার কারণে সিভিল সার্জন অফিসের তেমন কোনও কাজ করার সুযোগ ছিল না। তাছাড়া সরকারি বরাদ্দের এক খাতের টাকা ভিন্ন খাতে খরচ করার এখতিয়ার আমাদের নেই।’
খররচ কম হওয়া প্রসঙ্গে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আক্তার বলেন, ‘কুলাউড়া হাসপাতালে করোনা রোগীদের পরিচর্যা করার জন্য উন্নত আইসিইউ কিংবা সিসিইউ বেড নেই। তাই জরুরি রোগীদের বেশির ভাগ জেলা সদর হাসপাতাল অথবা সিলেটে পাঠানো হয়। আর যারা আক্রান্ত হয় তাদের বেশির ভাগ বাসায় হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেন। তাই এই খাতে খরচের পরিমাণ এমনিতেই কম হয়েছে। অন্য খাতে খরচ করার সুযোগ ছিল না।’
এ বিষয়ে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বর্ণালী দাশ বলেন, ‘প্রশিক্ষণ, টিকা প্রদান ও নমুনা সংগ্রহ বাবদ আমার উপজেলায় টাকা খরচ করা হয়েছে।’
জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিংহ জানান, গত অর্থবছরে কয়েকজন ছুটিতে ছিলেন, আবার লোকবলও কম ছিল। যার কারণে পুরো টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।
সিভিল সার্জন আরও জানান, ওই টাকা তারা সুনির্দিষ্ট খাতে ব্যয়ের কোনও পরিকল্পনা পাননি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব টাকা খরচ করা সম্ভব হয়নি। এসব টাকা মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। এ কারণে ব্যয়ের বিষয়ে সিভিল সার্জনের এখতিয়ার ছিল না। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার হিসাব মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৌলভীবাজারে করোনা রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে ‘অক্সিজেন প্ল্যান্ট’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।