সালমান শাহ ভবনে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরলেন ভক্তরা

বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা সালমান শাহ স্মরণে এবার সিলেটে কোনও কর্মসূচি পালিত হয়নি। একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণের কারণে নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ায় সালমান শাহ ভবনে ভক্ত কিংবা পর্যটকদের প্রবেশ করতেও দেওয়া হয়নি। এতে সালমান শাহ ভবনে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরলেন ভক্তরা। তবে ভক্তরা ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে দরগাহ মাজার প্রাঙ্গণে সালমানের কবর জিয়ারত করেছেন। পাশাপাশি অনেকে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। 

জানা যায়, চলচ্চিত্রে সালমান শাহ নামে জনপ্রিয় হলেও এই নায়কের প্রকৃত নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেটের জকিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী।

সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার সালমান শাহ ভবনে প্রবেশ করতে না পেরে কয়েকজন ভক্তকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। বাসায় প্রবেশ করতে না পেরে ফুল হাতে সালমানের কবরস্থানে যান তারা।

ঢাকা থেকে আসা সালমান শাহ ভক্ত অভি মহিনুদ্দিন বলেন, সিলেটে অন্য একটি কাজে এসেছি। তখন মনে হলো আজ সালমান ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী। তাই তার কবর জিয়ারত করলাম। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সালমান শাহ অমর হয়ে থাকবেন। তার প্রতিটি ছবি ছিল অসাধারণ। যার জন্য মানুষ এখনও তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

কিশোরগঞ্জ থেকে আসা সালমান ভক্ত আব্দুল হেকিম ও মনোয়ার হোসেন পেশায় পোশাকশ্রমিক। সালমান শাহকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রতি বছর সিলেট আসেন।

মনোয়ার হোসেন বলেন, রবিবার রাতে বন্ধুরা মিলে সিলেটে আসি। সালামন শাহ তো নেই। তার স্মৃতিগুলো দেখার জন্য কারখানা থেকে ছুটি নিয়েছিলাম। কিন্তু সালমানের বাসায় ঢুকতে না পেরে হতাশ হলাম। পরে দরগাহ প্রাঙ্গণে সালমানের কবর জিয়ারত করেছি সবাই।

কুমিল্লা থেকে আসা বাউল রাধা দত্ত বলেন, সালমানের প্রতিটি সিনেমা অসাধারণ। তার সিনেমার গানগুলো চমৎকার। যেকোনো গানের আসরে আমি সালমান শাহর সিনেমার গান গেয়ে থাকি। আমার মনে হয়, সালমান শাহ এখনও জীবিত। তার মৃত্যু হয়নি। সালমান শাহর বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পারি করোনার কারণে বাসায় সব কার্যক্রম বন্ধ। ভেতরে ঢোকা যাবে না। পরে হতাশ হয়ে ফিরে এলাম।

দরগাহ মাজার প্রাঙ্গণে সালমানের কবর

সালমান ভক্তদের ভালোবাসা দেখে আমি অভিভূত উল্লেখ করে সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানের ভক্ত ও পর্যটকরা সকাল থেকে বাসায় এসেছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে এবারের মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনও আয়োজন করা হয়নি। সালমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করতে ভক্ত ও পর্যটকদের অনুরোধ করেছি। যার যার অবস্থান থেকে দোয়া করতে বলেছি। সালমান শাহকে এখন মানুষ অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। মানুষের মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা কমে গেলেও সালামান শাহর ক্ষেত্রে তা হয়নি, বরং দিনে দিনে বেড়েছে। ভক্তরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখনও আসেন। আমি তাদের আবেগকে শ্রদ্ধা জানাই। তারা যে এখনও সালমানকে মনে রেখেছেন, এটা ভাবলে গর্ব হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইমনকে (সালমান শাহকে) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যথাযথ বিচার হয়নি। আমরা চাই অপরাধীদের দ্রুত বিচার করা হোক।’

ভক্ত ও স্থানীয়রা বলছেন, তারকার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে ভক্তরা সবকিছু ভুলে যান। তবে সালমান শাহর ক্ষেত্রে তা একেবারে বিপরীত। তার জনপ্রিয়তা এখনও আগের মতোই। ভক্তরা তার স্মৃতিগুলো এখনও লালন করেন পরম মমতায়। এক ধরনের অলিখিত সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে দাঁড়িয়াপাড়ার বাড়িটি। নায়কের প্রাপ্তির সব স্মারক আর পুরস্কারে পূর্ণ এই বাড়ির সবগুলো আলমারি। দেয়ালজুড়ে টানিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের সালমান শাহর ছবি। ড্রেসিং টেবিল, ব্যবহৃত বই। বাড়িতে এখনও রয়েছে সালমান শাহর ব্যবহৃত খাট-চেয়ার ও তৈজসপত্র।