চাকরি সিলেটে, প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক থাকেন আমেরিকায়

চিকিৎসার জন্য তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলেন। এরপর প্রায় ছয় বছর ধরে কর্মস্থলে উপস্থিত হননি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রায়গড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সৈয়দা জেসমিন সুলতানা। ইতোমধ্যে তিনি বেতনের চার লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছেন।

জানা গেছে, বর্তমানে ওই শিক্ষিকা সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করছেন। প্রধান শিক্ষিকা দীর্ঘদিন থেকে অনুপস্থিত থাকার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থার অবনতির বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান খান সিলেট বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত নেমে সত্যতা পান বিয়ানীবাজারের শিক্ষা কর্মকর্তা। গত মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে তদন্ত করেন তিনি।

সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল সৈয়দা জেসমিন সুলতানা রায়গড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। এক বছর নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও এরপর ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু নিয়মিত বেতনের টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জেসমিন সুলতানা সোনালী ব্যাংকের ঢাকা দক্ষিণ শাখা থেকে মোট চার লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, নিয়মনীতি না মেনে জেসমিন সুলতানা প্রবাসে সপরিবারে পাঁচ বছর ধরে বসবাস করছেন। ২০১৩ সালে যোগদানের পর থেকে মাঝে-মধ্যে স্কুলে আসতেন। ২০১৭ সালে এসে ব্যাংক থেকে সরকারি বেতন উত্তোলন করার সময় কয়েকদিন বিদ্যালয়ে এসেছিলেন।

এর আগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না- জবাবে তিনি বলেন, ‘কী জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- সেটি আমার কাছে রহস্যজনক লাগছে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বিষয়টি নজরে আসেনি। নতুন পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি নজরে এলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগ দায়ের করেছি।’

পাঁচ বছর ধরে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন না করে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন সৈয়দা জেসমিন সুলতানা- বিষয়টি নিশ্চিত করেন তদন্ত কর্মকর্তা বিয়ানীবাজার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুমান মিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রবাসে বসে চার লাখ টাকা সম্মানী তিনি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছেন। তদন্তে গিয়ে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদের বক্তব্য শুনেছি। তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, এর সত্যতা পাওয়া গেছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ান নাজমুল আলম বলেন, ‘জেসমিন সুলতানা কয়েক বছর আগে তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে তিন মাসের চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়েছিলেন। এখন তিনি কোথায় আছেন আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে জেসমিন সুলতানার ভাই রায়হান আহমেদ বলেন, ‘স্বামীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসা পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন আপা। বর্তমানে তিনি সেখানে বসবাস করছেন।’