ভেজাল বীজে নষ্ট কয়েক হাজার একর জমির ধান, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় কয়েক হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ভেজাল বীজের কারণে জমির অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বীজ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে সম্প্রতি জমিতেই মানবববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন তারা।

জানা গেছে, উপজেলার ইকরাম সুজাতপুর হাওরে বিস্তৃীর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ফসল আবাদ করা হয়েছে। প্রতি বছর ভালো ফলন হলেও এবার অধিকাংশ জমিতে অর্ধেক চারায় ধান গজিয়েছে। বাকি চারাগুলো থেকে ধান গজানোর আর কোনও সম্ভাবনা নেই। এসব হাওরে বছরে একবারই ধানের চাষ হয়। আর উৎপাদিত ধানের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা। কিন্তু ভেজাল বীজের কারণে এ বছর ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

স্থানীয় কৃষক আকবর মিয়া বলেন, ‘আমি নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গাচাষ করে আসছি। স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করে চারা রোপণ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের জমির ৬০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। মূলত নষ্ট ও খারাপ বীজের চারা রোপণ করায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।  কৃষকদের ক্ষতির জন্য ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।'

ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে সম্প্রতি জমিতেই মানবববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা

কৃষক সোনা মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছিলাম। কিন্তু আমার ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছি। যে জমিতে ধান হতো ২২ থেকে ২৫ মণ, এখন সে জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ ধানও হবে না।’

স্থানীয় সাব-ডিলার শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমি প্রতি বছর স্থানীয়ভাবে বীজ সরবরাহ করে থাকি, কোনও বছর সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার যে সমস্যা হয়েছে তাতে আমরা কৃষক হারাবো। কী কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই।’

স্থানীয় সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার ও সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘দুটি এলাকার প্রায় এক হাজার কৃষক জমি চাষ করে ভেজাল বীজের কারণে পথে বসবে। আমরা সাধ্যমতো জমিতে পানির ব্যবস্থা করেছি, কিন্তু ভেজাল বীজের কারণে জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ডিলারদের বিরুদ্ধ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে কৃষকদের রক্ষা করা কঠিন হবে।’ 

হবিগঞ্জ কৃষি অধিদফতরের সহকারী উপ-পরিচালক নয়ন মনি সূত্রধর বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর উপজেলা কৃষি অফিসার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রতি বছরই নতুন নতুন বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করতে হয়। কোনও কারণে পুরনো বীজ দিয়ে চারা তৈরি করলে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় পানির সমস্যার কারণেও এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।’ 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করলে সরকারের সাধ্য অনুযায়ী ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।