হবিগঞ্জে পানিবন্দি আড়াইশ’ পরিবার

কুশিয়ারা নদীঘেঁষা হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াইশ' পরিবার। ৫৩টি পরিবার নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ফলে আতংক ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে কুশিয়ারার তীরবর্তী দীঘলবাক ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে। 

দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর, ফাদুল্লাহ, পাহাড়পুর ও পারকুল অংশে দেবে যাওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি ব্যাগ। রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় কুশিয়ারা নদীঘেঁষা ইউনিয়নের মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর ও গালিমপুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে পাকাসড়ক ও মাধবপুর-গালিমপুর বাজার। বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় তিনটি গ্রামের প্রায় আড়াইশ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গালিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন ৫৩টি পরিবার। অনেকেই বাড়িঘরে হাঁটু পানি থাকা সত্ত্বেও গরু, হাঁস ও মোরগ ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। 

তিনটি গ্রামের প্রায় আড়াইশ’ পরিবার পানিবন্দি

এদিকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করা ৫৩টির মধ্যে ৪৭টি পরিবারের মাঝে ৫০০ কেজি চাল প্রদান করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: হবিগঞ্জেও চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা

মাধবপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও আমার মতো অধিকাংশ মানুষ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছে। নিজের ঘর, বাড়ি, গরু, ছাগল, মুরগি ও হাঁস রেখে কোথায় যাবো? এখনও সরকারি সহায়তা পাইনি। ইউএনও মহোদয় আসবেন শুনেছি, হয়তো তিনি এলে সহায়তা পাবো।’

গালিমপুর গ্রামের রামাকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক মানবেতর অবস্থায় জীবনযাপন করছি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, দ্রুত যেন এই সংকট কেটে যায়।’

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বর্তমানে গালিমপুর স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চাল পেয়েছি।’

দীঘলবাক ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আকুল মিয়া জানান, মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর, গ্রামের প্রায় আড়াইশ’ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে ৫৩টি পরিবার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।

বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া বলেন, ‘মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। সবসময় এলাকায় যাচ্ছি, খোঁজ-খবর রাখছি। বাড়িঘর ছেড়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অর্ধশতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। সময় যত যাচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীঘেঁষা মাধবপুর-গালিমপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। অনেকেই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। আশ্রয় নেওয়া পরিবারের মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। আসলে মোট কতোটি পরিবার পানিবন্দি, তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি। আমাদের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে পানি কমছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতে যেসব স্থানে বালুভর্তি ব্যাগ দেওয়া প্রয়োজন আমরা দিচ্ছি। সার্বক্ষণিক এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।’